ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

ভারত

মোমবাতি কারখানায় ব্যস্ততা তুঙ্গে

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৬, অক্টোবর ২৪, ২০২১
মোমবাতি কারখানায় ব্যস্ততা তুঙ্গে

আগরতলা (ত্রিপুরা): পূজা-পার্বণের মৌসুম চলায় ত্রিপুরায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মোমবাতি কারখানা শ্রমিকরা।

সরেজমিনে রাজধানী আগরতলা জয়নগর এলাকার এক কারখানা দেখা যায় শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত।

প্রতিদিন ১৯ জন শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন।

কারখানার মালিক সুজন ব্যানার্জী বাংলানিউজকে জানান, বছরের সব সময় এখানে মোমবাতি তৈরির কাজ হয়। তবে শরৎকাল এলে কারখানায় ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, এ সময় মোমবাতির চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয় কারণ এই ঋতুতে পূজা পার্বণ বেশি। ভাদ্র মাসের শেষ দিন শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মা পূজা দিয়ে এই মৌসুমী পার্বণ শুরু হয়। তারপর একে একে দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা এবং সর্বশেষে আলোর উৎসব দীপাবলীর মধ্য দিয়ে উৎসবের মৌসুম শেষ হয়। এসব পূজা এবং উৎসবের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে মোমবাতি। তাই এ সময় মোমবাতির চাহিদা এতটাই বাড়ে যে সে অনুযায়ী সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, সারাবছর যে পরিমাণে মোমবাতির চাহিদা থাকে, শুধু এই কিছুদিন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সারা বছর কারখানায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু এই মুহূর্তে কাজের চাপ বেশি থাকায় বাকি শ্রমিকদের কিছুদিনের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে।

সুজন ব্যানার্জী  জানান, বর্তমানে প্রতিদিন কারখানায় ১০ থেকে ১২ কুন্টাল মোমবাতি তৈরি হয়। এর মধ্যে একেবারে ছোট থেকে শুরু করে ১৫কেজি ওজনেরও এক একটি মোমবাতি রয়েছে। মজুত করার কোনো সুযোগ নেই, যে পরিমাণ উৎপাদন হয় সবই বিক্রি হয়ে যায়।

তিনি বলেন, করোনা মহামারীসহ অন্যান্য কারণে গত দুই বছর পূজা-পার্বণ এবং উৎসব তেমন বড় আকারে না হওয়ায় মোমবাতির চাহিদা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু এ বছর মোমবাতির রেকর্ড পরিমাণ চাহিদা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত ৩০ বছর ধরে মোমবাতির কারখানা চালাচ্ছেন। কিন্তু এ বছর পূজা মওসুমে মোমবাতির সর্বোচ্চ চাহিদা দেখা যাচ্ছে।

হঠাৎ করে মোমবাতির এত চাহিদা বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে বাংলানিউজেকে তিনি বলেন, গত দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে অর্থনীতি তীব্র মন্দা ছিল। সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অনেক ছোট ছোট কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে বহু মোমবাতির কারখানাও রয়েছে। এর ফলে সেসব কারখানার চাপ এসে পড়ছে তার কারখানায়।

অন্যান্য বছরের তুলনায় মোমবাতির দাম এ বছর বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এতে তাদের বাড়তি লাভ হচ্ছে না। কারণ ভারতজুড়ে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। মোমবাতি তৈরির প্যারাফিন পেট্রোলিয়ামজাত একটি সামগ্রী, তাই এটার দাম বাড়িয়েছে ভারত সরকার। ফলে তাদের কোনো বাড়তি লাভ হচ্ছে না।

কারখানায় গিয়ে দেখা যায় কর্মরতদের সবাই নারী শ্রমিক। তারা বড় বড় বাসনের মধ্যে মোমবাতি তৈরির কাঁচামাল প্যারাফিন গরম করছেন। তারপর চাহিদা অনুসারে তাতে লাল, সবুজ, হলুদ, কমলা ইত্যাদি পছন্দমত রঙ ঢেলে এগুলোকে তৈরি করছেন। আবার কিছু কিছু নারী সেই রঙিন এবং তরল মোম বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন আকারের ছাঁচের মধ্যে ঢেলে বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে ঠাণ্ডা করছেন। আবার কেউ ফাঁকা ছাঁচগুলোয় সুতা লাগাচ্ছেন, কেউ তৈরি হওয়া মোমবাতি সাইজ অনুসারে আলাদা আলাদা করে রাখছেন। সবশেষে গুণে গুণে প্যাকেট করে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তারা জানান, বছরের অন্যান্য সময় বাড়িঘরের কাজ শেষে দুপুরে মোমবাতি তৈরির জন্য কারখানায় আসতেন, আবার বিকেলের দিকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যেতেন। তখন কাজের তেমন কোনো চাপ থাকে না, নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করতে পারেন। কিন্তু উৎসবের মৌসুমে তারা খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সব কাজ শেষ করে দ্রুত কারখানায় চলে আসেন এবং সারাদিন এমনকি সন্ধ্যার পরও কাজের চাপ থাকে। তবে এ সময় কাজের চাপ বেশি থাকলেওতারা খুশি। কারণ, বাড়তি চাপ মানে বেশি রোজগার। তাই বেশি পরিশ্রম হলেও মনে কোনো কষ্ট নেই তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর, ২০২১
এসসিএন/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।