ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ সফর ১৪৪৭

ভারত

হাসিনা-দোসরদের পুশব্যাকের দাবি কলকাতাবাসীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৩৮, আগস্ট ৫, ২০২৫
হাসিনা-দোসরদের পুশব্যাকের দাবি কলকাতাবাসীর

কলকাতা: স্বৈরাচারী শাসনের পতনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত বছর ঠিক এ দিনে ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হত্যা ও খুনের দায় মাথায় নিয়ে কলকাতা-দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত তারা।

এ পরিস্থিতিতে কলকাতাবাসী পুশব্যাকের তীব্র বিরোধিতা করে জানাচ্ছেন, হাসিনা ও তার দোসরদের কেন বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে না? নাম উহ্য রেখে, কিছুদিন আগে এ একই দাবি করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৭ জুলাই হাসিনা-মোদির নাম উহ্য রেখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ভারতীয় বাঙালিদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে, তাহলে কেন অতিথি বলে রেখে দেওয়া হচ্ছে শেখ হাসিনাদের।

সরকারি মঞ্চ থেকে মমতা বলেছিলেন, কয়েকজন অতিথিকে তো ভারত সরকার রেখে দিয়েছে। আমি কি তাতে বাধা দিয়েছি? দিইনি। তার কারণ রাজনৈতিক বিষয় আছে। পার্শ্ববর্তী কান্ট্রি বিপদে পড়েছে, ভারত সরকারের অন্য কোনও বিষয় আছে, কই এ নিয়ে তো আমরা কোনদিন কিছু বলিনি। তাহলে আপনারা কেন বলবেন, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয়ে গেল?

তারও আগে ১৬ জুলাই মমতা বলেছিলেন, ‘কতজন ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে? তার উত্তর দিন। ’মমতার সেসব মন্তব্যকে সমর্থন দিচ্ছে কলকাতাবাসীর একাংশ।  

অভিজিৎ দে নামে শহরের এক বাসিন্দা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নীতিগত প্রশ্নই করেছেন। শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের যেসব নেতা-নেত্রীরা পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লিতে রয়েছেন। যাদেরকে কেন্দ্রীয় সরকার জামাই আদর করে রেখে দিয়েছে।  

অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি হিসেবে, বিদেশি হিসেবে বা রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার, শেখ হাসিনাকে কেন দিল্লিতে আশ্রয় দিয়েছে? শুধু শেখ হাসিনা নয় তার মত বিভিন্ন নেতা-নেত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউন, রাজারহাটের হাইরাস বিল্ডিংগুলো রয়েছে, তাদেরকে কেন পুশব্যাক করা হচ্ছে না। এ দ্বিচারিতা বেশিদিন চলবে না।

সৌমেন পন্ডা বলেছেন, কেন্দ্র সরকার কেন ওদের এত খাতির করছে। তাদের পশ্চিমবঙ্গ-দিল্লিতে আশ্রয় দিচ্ছে। তাদের রাখার অর্থ কে জোগান দিচ্ছে। কেউ না, সেই অর্থ আমার আপনার ট্যাক্স এর অর্থে। ভারতীয়দের না করে তাদের পুশব্যাক করা উচিত।

একই মত শহরের আইনজীবী, শিক্ষক এবং বিশিষ্টদের। কলকাতা হাইকোর্টের মঞ্জুশ্রী সাহা পোদ্দার বলেছেন, নিউটনের সুখবৃষ্টি নামে হাইরাইজ এপার্টমেন্টে সবািই বসবাস করছে। কেন? কি করে ওদের থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? এটা এখন বিরাট প্রশ্ন। তাদের সেল্টার দেওয়ার জন্য অ্যাপার্টমেন্ট এবং ওই সংলগ্ন বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট এলাকায় তাদের থাকার জন্য এখন বিখ্যাত হয়ে গেছে। তাদের জন্য এক নীতি আর সাধারণদের জন্য অন্য নীতি? ধরে নিলাম কোন বাংলাদেশি ভারতে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু কেন্দ্র সরকার কেন আইন তাদেরকে দেশে পাঠাচ্ছে না। আর যদি পুশব্যাক নীতি নিয়ে থাকে তাহলে এসব নেতা-নেত্রীকেও পুশব্যাক করানো উচিত।

শিক্ষিকা প্রতী মিত্র বলেছেন, আজ যে প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী তুলেছেন, সেই প্রশ্ন আমারও। যেখানে ভারতীয় বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে আবার বাংলাদেশিদের প্রশ্রয় দিয়ে তাদের ভারতে রাখা হচ্ছে। আমাদের টাকায় তাদের খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা দ্বিচারিতা।

ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কলকাতায় অবস্থান নিয়ে কলকাতাবাসীর একাংশের মধ্যে যেমন কৌতূহল রয়েছে তেমন অপরঅংশের মধ্যে ক্ষেভের সঞ্চার হচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতা ভিত্তিক দুইটি গণমাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয়। এরমধ্যে একটি ছিল কাদেরের অডিও বার্তা, অন্যটি ছিল প্রতিবেদন। একইভাবে হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ পেয়েছে। তবে ওই সাক্ষাৎকারগুলো কলকাতায় বসে দেওয়া নাকি অন্য কোথাও তা জানা যায়নি।

কলকাতার গণমাধ্যমের কর্মীদেরই একাংশ বা বিভিন্ন সূত্র বলছে, হাসিনার দলের নেতাদের কেউ আছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত-মধ্যমগ্রাম, কেউ আছেন রাজারহাট বা নিউটাউন, আবার কেউ আছেন বর্ধমানে।

তবে এতদিন এসব নিয়ে বঙ্গবাসী চুপ থাকলেও, এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কারণ, এভাবে পুশব্যাক মেনে নিচ্ছে না অনেকেই। তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ বাংলাদেশিকে পুশব্যাক করা হয়েছে। তাহলে ১৪০ কোটি দেশে, এই কয়েকজনের জন্য ধ্বংস হচ্ছে ভারতের অর্থনীতি? নাকি নীতিতেই ভুল রয়েছে?

ভিএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।