ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলা ভাষাভাষীদের ওপরে সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ তুলে বার বার সরব হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই পরিস্থিতিতে অনেক বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করাচ্ছে ভারত, এমন অভিযোগ কম নয়।
এই নিয়ে ভারতজুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরবও হচ্ছেন। আর সেই আবহে মমতা গলায় ভিন্ন সুর!
মমতা অভিমত, ‘যারা ভারতের নাগরিক নয়, বিদেশি, ভারত যদি মনে করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অ্যাকশান নেওয়া উচিত। ’
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) কলকাতার ধনধান্য মঞ্চ থেকে মমতা বলেছেন, 'দেশভাগের প্রভাব আমাদের ওপরেও পড়েছে এটা ঠিক। যারা এক কাপড়ে সবকিছু ফেলে দিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন, তারা তো ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হয়েছেন। কিন্তু যারা দেশের নাগরিক নয়, ফরেনার্স, ভারত সরকার যদি মনে করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অ্যাকশন নেওয়া উচিত। যদিও এই বিষয়টা আমাদের (রাজ্য সরকার) হাতে নেই। ’
এর পাশাপাশি মমতা বলেছেন, ভিন রাজ্যে অযথা বাঙালিদের ওপর হেনস্তা করা হচ্ছে। মমতার অভিযোগ স্বরে বলেছেন, 'আমি পরশুদিন দেখলাম একজন টেকনিক্যাল মানুষ, তিনি তার সন্তানকে নিয়ে নয়ডাতে হোটেলে থাকতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সন্তানের সাথে বাংলায় কথা বলার কারণে তাকে সেই হোটেলে থাকতে দেয়নি। '
মমতার অভিমত, আমি যদি অন্য ভাষাকে সম্মান করি তবে তোমরা (বিজেপি) অন্য ভাষাকে সম্মান করবে না কেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব কোন ভাষায় কথা বলতেন?
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলা ভাষায় কত বৈচিত্র্য, কত বাহার, একটা সুরভিত ভাষা। বাংলা ভাষার যে মাধুর্য আছে সেটা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। প্রয়োজনে আমাদের ইংরেজি শেখা দরকার, কারণ এটা একটা আন্তর্জাতিক ভাষা। সব ভাষা জানা উচিত। যত ভাষা শিখবেন তত উন্নত হবেন। কিন্তু দয়া করে মাতৃভাষাকে ভুলবেন না, মাকে ভুলবেন না। ’
‘পশ্চিমবঙ্গের মাটি স্বামী বিবেকানন্দের, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রফুল্ল চাকী, ক্ষুদিরাম বসু, নজরুল ইসলামের মাটি। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যারা সবচেয়ে বেশি কারাগারে বন্দি ছিল তারা ছিলেন বাঙালি। তাছাড়া বাংলা না থাকলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। ’
স্বাধীনতার প্রাক দিবসে (১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস) উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেছেন, ‘ভারতের স্বাধীনতার আগে দেশ একটা পিন উৎপাদন করতে পারত না, আজকে সেই দেশ প্লেন তৈরি করছে। অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু তারপরও দেশবাসীর মধ্যে একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ’
মমতার দাবি, ‘আজকে দিল্লিতে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্ট এর দিন কোন আমিষ খাওয়া যাবে না, বোম্বাইতে, হরিয়ানাতেও এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এখানে এসব হয় না। আমাদের এখানেই আসল স্বাধীনতা রয়েছে। যার যেটা ইচ্ছে খাও, পরিধান করো, যার যা ইচ্ছে বলো। যার যা অধিকার সেটা পালন করো। কারণ আমরা ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন মনীষীদের বই পড়ে বড় হয়েছি। '
মমতার প্রশ্ন, ‘বাংলায় কথা বলা কি অপরাধ? বাংলায় কথা বললে তার কান কেটে দিতে হবে? গতকাল বোম্বাইয়ে বাংলায় কথা বলেছেন বলে এক ব্যক্তির কান কেটে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওরা কি ভুলে গেছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি তনুজা, জয়া বচ্চন, জিৎ গাঙ্গুলী, অরিজিৎ সিং সবাই এই বাংলার মাটি থেকে বড় হয়েছেন। অমিতাভ বচ্চন কোথায় চাকরি করতেন? এই খড়্গপুরে। এমনকি প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী বাপি লাহিড়ীর মতো ব্যক্তিদের উত্তরণ ঘটেছে এই বাংলা থেকে। আর সেই বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?'
ভিএস/এএটি