ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ সফর ১৪৪৭

ভারত

দিল্লি-নয়ডা-গুরুগ্রামে গৃহকর্মীর তীব্র সংকট!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২৯, আগস্ট ১৩, ২০২৫
দিল্লি-নয়ডা-গুরুগ্রামে গৃহকর্মীর তীব্র সংকট!

ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্তা ইস্যুতে সরব কংগ্রেসসহ ভারতের সবকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আর এমন পরিস্থিতিতে দিল্লিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কমছে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা।

একই অবস্থা নয়ডা, গুরুগ্রামের মতো বৃহত্তর দিল্লির একাংশ। এর জেরে ওই অঞ্চলগুলোয় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে গৃহকর্মীর।

কর্মী সংকটে ভুগছে সেসব অঞ্চলের পরিবারগুলো। মূলত ভারতের দিল্লি অত্যন্ত ব্যস্ত শহর। এসব অঞ্চলে পরিবারগুলো জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত থাকায় নির্ভর করতে গৃহকর্মীর বা কর্মচারী বা কাজের বুয়ার ওপর। কিন্তু এখন সেসব রাজ্যে কাজের লোক খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন হন্যে দিয়ে খুঁজছেন রাঁধুনি, গৃহকর্মী, চালক ইত্যাদি।

কয়েকদিন ধরেই দিল্লির নয়ডা অঞ্চলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। তাতেও এই ধরনের জরুরিভিত্তিক গৃহকর্মী জোরার হিড়িক পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই নাগালের বাইরে চলে গেছে। এর কারণে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ খবর সামনে আসছে।

জানা যাচ্ছে, হঠাৎ করেই দিল্লিসহ আশেপাশের এলাকা ছেড়ে বাঙালিদের অন্যত্র চলে যাওয়ার পেছনে মূলত দুইটি কারণ রয়েছে। প্রথমত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিক মানুষকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। তাদের বেশ কিছুকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে, আবার কাউকে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

পুলিশের ধরপাকড়ের হাত থেকে বাঁচতে সেসব বাংলাভাষী মানুষ দিল্লি ত্যাগ করছেন। দ্বিতীয়ত বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই কারণেই বহু পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় ফিরে আসছেন।

এসআইআরের মাধ্যমে বিহারে ৬৫ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এমনটা হওয়ার আশঙ্কা পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে বলে বাংলার সরকার মনে করছে। যা নিয়ে গত দু-দিন ধরে ভারতের নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন বিরোধীরা।

সোমবার (১১ আগস্ট) এই বিক্ষোভের কারণে কংগ্রেম নেতা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোটার তালিকা সংশোধন নতুন কিছু নয়। কমবেশি প্রতি ১০ বছর অন্তর হয়ে থাকে। তাতে স্পষ্ট হয় কোন এলাকায় কত ভোটার মৃত বা স্থান পরিবর্তন করেছে।

বিরোধীদের দাবি, নভেম্বরে বিহারে ভোট। আর বছর পেরোলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। দুই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই এসআইআর চক্রান্তে নেমেছে নির্বাচন কমিশন।  
বিরোধীদের দাবি, যদি এসআইআর করতেই হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দুই রাজ্যে কেন? গোটা ভারতে হচ্ছে না কেন? এদিকে নির্বাচন কমিশনের দাবি, ধাপে ধাপে গোটা ভারতেই হবে। এবং তা হবে প্রতিটা রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে বিহারে বিধানসভা ভোট। ফলে ওই রাজ্য দিয়েই শুরু হয়েছে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ।

বাংলায় বাম আমলে ২০০২ সালে ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে ২৪ লাখ মানুষের নাম বাদ গিয়েছিল। যদিও সেই সময় তৎকালীন শাসক এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে এরকম চাপ নেই, যা এখন প্রকাশ্যে এসেছে রাহুল গান্ধী ও মমতার নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে।  এহেন পরিস্থিতিতে দিল্লি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বাঙালিরা। তার অন্যতম দুই ইস্যু হলো ভোটার তালিকা নাম যুক্ত রাখতে, এবং সম্প্রতি ভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের ওপর অত্যাচার। এই দুই কারণে বাঙালি কমছে ভারতের ভিন রাজ্যে। এর প্রভাব পড়ছে ওই সব রাজ্যে স্থানীয়দের। সমস্যা এতটাই বড় হয়ে উঠেছে যে, ভারতের প্রথম সারি গণমাধ্যমগুলো গুরুতর সাথে সেই সমস্যা ছাপা হচ্ছে।

ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।