কলকাতা: ভারতে সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাস হওয়ার পর থেকে কয়েকদিন ধরেই অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ। নতুন আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতিতে গত ১১ এপ্রিল থেকে মুর্শিদাবাদে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ৩০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও তার পরদিন কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও ৫০০ সদস্য মোতায়েনের। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ, সকলের খরচ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। আর সেই সন্ধিক্ষণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৩ জন দক্ষ রাজ্যের পুলিশকর্তাকে বিশেষ ডিউটিতে পাঠিয়েছে মুর্শিদাবাদে। রোববার (১৩ এপ্রিল) তাদের সামসেরগঞ্জ থানায় রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রোববার স্পর্শকাতর এলাকা পরিদর্শন করেন বিএসএফের আইজি। সুতি, ধুলিয়ান, সামসেরগঞ্জ, জঙ্গিপুরসহ মুর্শিদাবাদের যেসব এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছিল, সেখানে বর্তমানে টহল দিচ্ছে রাজ্য পুলিশ ও বিএসএফ।
এমন পরিস্থিতিতে আশান্তি যেন বৃহৎ দাঙ্গায় রূপান্তরিত না হয়, সে কারণে ১৬ এপ্রিল কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জিন ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে ওয়াকফ ইস্যুতে তিনি সরাসরি বার্তা দেবেন সংখ্যালঘু সমাজের উদ্দেশে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে এই আইন কার্যকরী হবে না বলে তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। মমতা বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সংখ্যালঘু এই রাজ্যে নিরাপদ। সংখ্যালঘুরা তার ওপর ভরসা রাখতে পারেন।
১৬ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরের এই সম্মেলনকে সফল করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে ওয়াকফ স্টেটের মুতাওয়াল্লি ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, নাখোদা মসজিদের ইমাম তথা সভার আহ্বায়ক মাওলানা শফিক কাসেমি, অল ইন্ডিয়া ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা হাজী কামরুল হুদা, অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা বাকিবিল্লাহ মোল্লা। নেতাজি ইন্ডোর থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন, তার জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতের মুসলিমরা অপেক্ষায় রয়েছেন।
অপরদিকে, এখনই দমছে না বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়। তারা আগামী ২৬ এপ্রিল কলকাতায় ব্রিগেড ময়দানে সমাবেশ করতে চলেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের নেতৃত্বে। ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে ব্রিগেডের এই সভাকে সমর্থন জানিয়েছেন ফুরফুরা দরবার শরিফের পীরজাদারা। এই নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে একপ্রস্থ বৈঠকও করে ফেলেছেন। তাদের বৈঠকের মূল ইস্যু—নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় থাকা উচিত নাকি আন্দোলন এগিয়ে নিতে ব্রিগেডে সমাবেশ করা!
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামানসহ পীর ইমরানউদ্দিন সিদ্দিকী, পীরজাদা মেহরাব সিদ্দিকী, পীরজাদা সওবান সিদ্দিকী, পীরজাদা মিনহাজ সিদ্দিকী, পীরজাদা সাইমউদ্দিন সিদ্দিকী, পীরজাদা কাশেম সিদ্দিকী মতো বিশিষ্টরা। সেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভারতের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সকলে।
প্রসঙ্গত, নয়া ওয়াকফ আইন পাস হওয়ার পর অশান্তির আঁচ এসে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। বাস-ট্রেনে ভাঙচুর চালানো হয়। জ্বলে ওঠে মুর্শিদাবাদ। টিয়ারশেল ছোড়ে, গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয় এক মুসলিম কিশোর। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। এরপরই আরও অশান্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। অপরদিকে বাবা-ছেলেকে নিজ বাড়িতে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি তথ্য মতে, মৃত তিনজনই সামশেরগঞ্জের বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে অশান্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
ভিএস/এমজেএফ