ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ক্রিকেট

বুলবুল বনাম তামিম: বিসিবি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০২, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
বুলবুল বনাম তামিম: বিসিবি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে! আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও তামিম ইকবাল/সংগৃহীত ছবি

বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিন যে নাটক তৈরি হচ্ছে, তা আবারও প্রমাণ করছে—বাংলাদেশে ক্রিকেট রাজনীতির বাইরে নয়।

বিসিবির পক্ষ থেকে সম্প্রতি তিন সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড অব ডিরেক্টরস নির্বাচন পরিচালনা করবে।

কমিশন বোর্ডের গঠনতন্ত্র ও বিধি অনুযায়ী পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও চূড়ান্ত করবে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. সিবগাত উল্লাহ, বিপিএম, পিপিএম। তৃতীয় সদস্য হবেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের যুগ্মসচিব (এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর), যিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও কাজ করবেন।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বহুল প্রতীক্ষিত বিসিবি নির্বাচনকে ঘিরে এবার রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকার সমর্থিত বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপি সমর্থিত সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক বিসিবি সভাপতি আলী আসগর গত ৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দল থেকে আমরা তামিমকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে বলেছি। আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি তামিমের সঙ্গে কথা বলেছি, সে একজন ভালো মানুষ এবং অসাধারণ খেলোয়াড়। যদি সে বিসিবি সভাপতি হয় এবং আমরা তাকে দিকনির্দেশনা দিই, তবে সে পুরো বিষয়টি সামলাতে পারবে। ’

আলী আসগরের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে যে, বিএনপি তামিমকে নিয়েই সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে এবং তারা মোটেও ক্রিকেটকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখার পক্ষে নয়।

তামিম, যিনি একসময় অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদলান, এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমর্থন পাচ্ছেন। জানা গেছে, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি তামিম একাধিক বৈঠক করেছেন।

বাংলাদেশে সবসময় সরকারদলীয় প্রভাব বিসিবিতে থেকেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে (ফেব্রুয়ারি ২০২৬) ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইটা সহজ হবে না। বুলবুল নিজেই সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যদিও শুরুতে তিনি কেবল নির্বাচন আয়োজনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

আসন্ন বিসিবি নির্বাচন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা হবে। গত দশকে নাজমুল হাসান টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন। কিন্তু এবার হবে প্যানেলভিত্তিক লড়াই। ব্যবসায়ী-নিয়ন্ত্রিত ক্লাবগুলো, যারা বিএনপি সমর্থিত, তারা তামিমকে শক্তিশালী করতে একজোট হচ্ছে।  

অন্যদিকে, বুলবুলকে সমর্থন দিচ্ছে বর্তমান ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অ্যাড-হক কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিগুলো সরাসরি সরকারের প্রভাবে পরিচালিত। যদি এসব জেলার প্রতিনিধি ও ক্লাবগুলো একত্রিত হয়, তাহলে বুলবুলের আসন ঝুঁকিতে পড়বে।

২৫ জন পরিচালক (ক্লাব থেকে ১২, জেলা ও বিভাগ থেকে ১০, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনীত ২ এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি ১ জন) সভাপতি নির্বাচিত করবেন।

ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা, যারা বুলবুলকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা ক্লাব কোটা থেকে কয়েকটি আসন চাইছিল। কিন্তু সেটি সফল হয়নি। তবে বিসিবিতে সরকারি হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়—নাজমুল হাসানকে দীর্ঘদিন সভাপতি হিসেবে রাখা থেকে শুরু করে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সুযোগ দেওয়া পর্যন্ত এর প্রমাণ মিলেছে।

গত সরকার পতনের পর বিসিবির রাজনীতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। শুরুতে মনে হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, তারা প্রকাশ্যেও তা বলেছিল। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।

আসগরের ঘোষণার একদিন পর আমিনুল দাবি করেন যে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। বিসিবি ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এবং বুলবুলের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র প্রহরী চেয়েছে।

বুলবুল এক টিভি চ্যানেলে বলেন, ‘কিছু নিরাপত্তা উদ্বেগ আছে এবং আমি ভীত বোধ করছি। ’ 

এর পরপরই তামিম বলেন, বুলবুলকে তার দাবি পরিষ্কার করতে হবে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে তাকে সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।

ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’ সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সম্প্রতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যিনি আগে তার সুপারিশে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল বুলবুলকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা।

৭ সেপ্টেম্বর আসিফ শীর্ষ সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের ক্রীড়া সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকেন। বিস্ময়ের বিষয় হলো, আমিনুলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আসিফ বলেন, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি আরও জানান যে, বুলবুল হুমকির ফোন পেয়েছেন।

আসিফ বলেন, ‘আমরা কেবল আইনের আওতায় থেকে হস্তক্ষেপ করব। এর বাইরে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। ’

তিনি আরও বলেন, “ডেপুটি কমিশনারদের ফোন করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাউন্সিলর বানাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ডিসিরা আমাকে জানাচ্ছেন, তারা হুমকি পাচ্ছেন। বুলবুল ভাইকেও ফোন করে বলা হয়েছে, ‘আপনি সরে দাঁড়ান, আপনাকে সিইও বানাবো। ’ এসব ঠেকাতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ” 

তথ্যসূত্র: ক্রিকবাজ

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।