জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেতৃত্বদানকারী কিশোরী রুবায়েত হোসেন মৃত্তিকা এখন আন্দোলনের প্রতীক। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি রূপা হোসেনের কন্যা মৃত্তিকা সদ্য এসএসসি পাস করেছে সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে।
ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যখন দেশজুড়ে গর্জে উঠছিল ছাত্র-জনতা, তখন রংপুরে শহীদ হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় সৈয়দপুর শহর। এরপরই ১৭ জুলাই আন্দোলনে নামার আহ্বান জানায় মৃত্তিকা। শহরের পাঁচমাথা মোড়ে একত্রিত হয়ে সহপাঠীদের নিয়ে মিছিল করে সে।
এই আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে আহত হয় অনেকে, কারও শরীর থেকে ঝরে রক্ত। কিন্তু মিছিল থেমে যায়নি। মৃত্তিকা সেদিন ছিল রাজপথের প্রথম সারিতে।
এরপর ২১ জুলাই রাতে বিক্ষোভ শেষে বাড়ি ফিরেছিল সে। মা রূপা হোসেনের সঙ্গে ঘুমাতে গেলে রাতের আঁধারে পুলিশ হানা দেয় তাদের বাসায়। দরজা ভেঙে ঢুকে মৃত্তিকার মাকে গ্রেফতার করে তারা। সে সময়ের কথা স্মরণ করে মৃত্তিকা বলে, আমি ভয়ে চিৎকার করি, পরিবারের লোকজন ছুটে আসে, কিন্তু পুলিশ আমার মাকে নিয়ে যায়।
মায়ের গ্রেপ্তারের পর নিরাপত্তাহীনতায় কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকে মৃত্তিকা। দেখা করার চেষ্টা করেও মায়ের কাছে যেতে পারেনি।
৪ আগস্ট ২০২৪, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল ইন্টারনেট। শহরে বাড়ে পুলিশের উপস্থিতি, গ্রেপ্তারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এতে দমে যায়নি মৃত্তিকা। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে বিকল্প পথে যোগাযোগ করে সে আবারও আন্দোলনে যুক্ত হয়।
৫ আগস্ট সকালে, আবারও পাঁচমাথা মোড়ে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পুলিশের কড়া নজরদারি উপেক্ষা করে তারা চালিয়ে যায় বিক্ষোভ। দুপুরের দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে— শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেছেন। এ খবরে উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা শহর। রাজপথে নেমে আসে আনন্দমিছিল।
মৃত্তিকা বলে, আমরা স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে লড়েছি। আবু সাঈদের মৃত্যু আমাকে বিচলিত করে। আমার মা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত—এই অভিযোগে পুলিশ আমাদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে নিয়ে যায়। আমাকে অপমান করে। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হই আমি। হাসপাতালে নিতে না পেরে মামার বাড়িতেই চিকিৎসা করান। সুস্থ হয়ে আবারও আন্দোলনে ফিরে যাই।
সে আরও বলে, টেলিভিশনে ভাই-বোনদের মৃত্যু আর বাঁচার চিৎকার আমাকে আন্দোলনে টেনে নেয়। শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা যেন নতুন করে শ্বাস নিতে শুরু করি, যেন নতুন বাংলাদেশ পেলাম।
এমজে