রাঙামাটি: কাচালং নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব লাইল্যাঘোনা গ্রাম। এ গ্রামের ৬০টি পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাচালং নদীর পূর্ব পাড়ে বসবাস করা পরিবারগুলোর দিন কাটছে আতঙ্কে। এক সময় বর্তমান নদীর প্রায় মাঝখান পর্যন্ত সড়কের সীমানা ও নিজস্ব জায়গা ছিল পরিবারগুলোর। কিন্তু ভাঙতে ভাঙতে সড়ক তো বিলীন হয়েছেই, এখন ভাঙতে শুরু করেছে বাড়িঘর, জমি।
এরই মধ্যে নদীতে বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে গেছেন ১০ পরিবারের লোকজন।
নদী ভাঙনের পাশাপাশি এ এলাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে অল্প বৃষ্টি হলে পুরো এলাকা তলিয়ে যায়।
চলাফেরার রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের চলাচল বিপদজনক হয়ে ওঠে। নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা-বন্যার সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের স্থানীয় লোকজন বেড়িবাঁধ ও উচুঁ সড়ক চান।
স্থানীয় কৃষক মো. আফসার হোসেন বলেন, আমরা কাপ্তাই বাঁধের কারণে উদ্বাস্ত হয়ে এ এলাকায় বসবাস শুরু করি। এক সময় নদীর পাড়ে বিশাল জায়গা ছিল আমাদের। চলাচলের জন্য রাস্তা ছিল। এখন রাস্তা নেই, সেই সঙ্গে বসতঘরের জায়গাও হারিয়ে যাচ্ছে নদীতে। এখন যদি নদীতে বেড়িবাঁধ দেওয়া না হয়, তাহলে আমাদের অবশিষ্ট জায়গাটুকু হয়তো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো. আব্দুল খালেক বলেন, আমরা প্রায় ৫৫-৬০ বছর এ এলাকায় বসবাস করেছি সুন্দরভাবে। কিন্তু এখন নদী ভাঙন ও বন্যার কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
নদী ভাঙন ঠেকাতে ব্যক্তি উদ্যোগ ও সরকারি সহায়তায় ছোট ছোট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যার কোনোটিই কাজে আসেনি। এখন এ ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার সমাধান এখন বেরিবাঁধ নির্মাণ।
তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাঁধ নির্মাণের অনুরোধ জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন বলেন, আমাদের এ এলাকাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার মধ্যে অন্যতম একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। অল্প বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় পুরো গ্রাম। নদী ভাঙনের ফলে ৬০টিরও বেশি পরিবার আতঙ্গে আছে। শুধু তাই নয়, এ এলাকাটিতে নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র, নেই উঁচু সড়ক। বন্যা হলে মানুষজন যে আশ্রয় নেবে, এমন একটি স্থানও নেই।
বাঘাইছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল মাবুদ বলেন, বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকা কাচালং নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। বিশেষ করে করেঙ্গাতলী থেকে শুরু করে দুরছড়ি এলাকা পর্যন্ত বেশ অনেক যায়গায় নদীর দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কাচালং নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে গিয়েই নদীর দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত প্রকল্প নিয়ে সমস্যার সমাধান করলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে এ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বদলে যেতে পারে বাঘাইছড়ির মানচিত্র।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বললেন, আমরা কাচালং নদীর ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলো জরিপ করছি এবং পূর্ব লাইল্যাঘোনা এলাকার ভাঙন রোধে মন্ত্রণালয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন (এস্টিমেট) প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত প্রকল্প দেওয়া হবে।
এসআই