নরসিংদী: অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা এনসিপির কেউ নয়, তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি। গণঅভ্যুত্থানকে শক্তিশালী করতে, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তারা সরকারে রয়েছে।
দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নরসিংদী পৌরসভার সামনে এনসিপির দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছিলাম। সেই আন্দোলন পর্যায়ক্রমে মানুষের মুক্তির দাবিতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। পহেলা জুলাই দেশ গড়তে পদযাত্রা শুরু করেছিলাম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চল থেকে। আমরা এক মাসব্যাপী পদযাত্রা করে বিপ্লবের এ নগরী নরসিংদীতে এসেছি। বিপ্লবের ইতিহাস আমরা কেউ ভুলে যাইনি। আমাদের এখনো মনে আছে ১৮ জুলাইয়ের কথা। আমরা সবাই জানি ১৮ জুলাই নরসিংদীতে কি হয়েছিল। ১৭ জুলাই যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে নেমে এসে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছিলাম। সেই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে নরসিংদীর ছাত্র জনতা নেমে এসেছিল। ১৮ জুলাই নরসিংদীর শিক্ষার্থী তাহমিদ শহীদ হয়ে ছিলেন। ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আহমিদকে গুলি করে হত্যা করেছিল সে ফ্যাসিস্টরা। সেদিন আরো শহীদ হয়েছিল নরসিংদী শিক্ষার্থী আমার ভাই ইমন।
তিনি আরও বলেন, নরসিংদী জেলার ২২ জন শহীদ হয়েছে। এ অভ্যুত্থানে এবং এই বিপ্লবে নরসিংদী ছাত্র জনতা নেমে এসেছিল একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। কিন্তু এক বছর পরও জুলাই পদযাত্রায় আমরা একই দাবি নিয়ে নেমেছি। আমরা দেখেছি এক বছরে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। নতুন সংবিধানকে প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া হয়নি এবং ফ্যাসিস্টের রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে অপসারণ করতেও দেওয়া হয়নি। আমাদের ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়নি। আমরা কিছুই ভুলিনি আমরা কোনো দাবি থেকেও সরে আসিনি। আমরা সংগঠিত হচ্ছি, আমরা সংগঠিত হয়ে আপনাদের এ দাবিগুলো আদায় করে ছাড়ব।
নাহিদ বলেন, নরসিংদীতে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, এ গণঅভ্যুত্থানের দাবির প্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশের মানুষ নেমে এসেছিল, সেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ মুক্ত একটি বাংলাদেশের দাবিতে। আমাদেরকে এখনো রাজপথে নামতে হচ্ছে। আমরা আগামী ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে জড়ো হবো। আমরা বিশ্বাস করি শুধু নরসিংদীবাসী আসলেই, আমরা শহীদ মিনার থেকেই আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়তে পারবো। শুধু নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরবাসী আসলেই ঢাকা ভরাট হয়ে যাবে।
এর আগে পথসভায় মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় এনসিপির সমাবেশ ঘিরে যারা নেতাকর্মীদের ওপর হাত তুলবে, তাদের জবাব দেওয়া হবে। এখন ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের ভয়ে থাকে, আতঙ্কে থাকে। এনসিপি ব্যবসায়ীদের কাছ চাঁদা চায় না। দেশের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায়। এ সময় তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চব্বিশের ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলোকে ক্ষোভ ভুলে আবারো ঐক্য হওয়ার আহ্বান জানাই।
এর আগে দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে শহীদ পরিবারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি শহীদ পরিবারের কথা শোনেন ও তাদের সমবেদনা জানার। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় পথযাত্রা শুরু করে ৬টায় নরসিংদী পৌরসভা চত্বরে পথসভায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম, মুখপাত্র শামান্তা শারমিন, মুখপাত্র ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলীসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
জেএইচ