সিলেট: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। যে নতুন সংবিধানে আপনার-আমার অধিকারের কথা থাকবে, সিলেটের মানুষের মর্যাদার কথা থাকবে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট। যে সিলেট থেকে সারাদেশে ইনসাফের বাণী প্রচার হয়েছিল। সিলেটকে ইতিহাস-সংস্কৃতির আলোকে দেখতে হবে। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে সিলেট। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান, সিলেট বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় মাওলানা ভাসানির প্রচারণায় সিলেটের মানুষ পূর্ব বাংলার সঙ্গে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু আমরা আমাদের পূর্ণ সিলেট পাইনি। করিমগঞ্জসহ অনেক এলাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও সিলেটকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গ্যাস, খনিজ ও পাথরের মতো সম্পদ থেকেও এই অঞ্চল বারবার অবহেলিত হয়েছে।
নাহিদ বলেন, আমরা আজ আপনাদের কাছে এসেছি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, এই সিলেটের মাটিতে সাংবাদিক এটিএম তুরাব, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেনসহ অন্তত ১৭ জন শহীদ হয়েছেন। আমরা সেসব শহীদের উত্তরসূরি এবং তাদের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সিলেটে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের মানুষ লন্ডন জয় করেছেন, বাংলাদেশ জয় করেছেন। আমরা সেসব প্রবাসী ভাইদের ভোটাধিকারের কথা বলছি। আমরা চাই, সিলেটসহ বাংলাদেশের সব প্রবাসীরা দেশের নীতিনির্ধারণের অংশ হবেন। সিলেটের আলেম সমাজ, নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সিলেটের নানাবিধ জাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। আমরা দেশকে বহু সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গড়তে চাই, সিলেট তার অন্যতম। এখানে শত শত ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের সেসব ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা দিতে হবে।
এ ছাড়া তেল, গ্যাস, পাথরসহ খনিজ সম্পদের অভয়ারণ্য এই সিলেটকে আধুনিক এবং উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য এনসিপি কাজ করবে- এমনটি প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অভ্যুত্থানে শহীদ ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে। আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে ইমানিভাবে সেসব কাজ করার কথাও জানান নাহিদ।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেটের মাদরাসা ও স্কুল-কলেজের ছাত্ররা লড়াই করে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল। লন্ডনে প্রবাসী ভাই-বোনেরা সাপোর্ট দিয়েছিল, আমরা তাদের ভুলিনি, সিলেটের এই সমাবেশ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আগামীর নতুন বাংলাদেশে সিলেট হবে এনসিপির অন্যতম দুর্গ। সিলেটবাসী আজ তা দেখিয়ে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, কেন্দ্রীয় যুব সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব জাহিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আবু বাকের মজুমদার, ব্যারিস্টার নুরুল হুদা, সিলেট জেলা সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন সাহান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নবগঠিত দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার নিভা এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
এনইউ/আরবি