রাঙামাটি: বর্ষা এলেই রাঙামাটির পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষের জীবনে নেমে আসে শঙ্কা। প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিতে জেলায় ঘটে ছোট-বড় পাহাড়ধসের ঘটনা।
২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২০ জনের প্রাণহানির পর প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে। ভারী বৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে বৃষ্টি থামলেই তারা আবার ফিরে যান আগের ঠিকানায়। দীর্ঘ মেয়াদি পুনর্বাসন বা ঝুঁকিমুক্ত স্থায়ী আবাসনের উদ্যোগ না থাকায় সমস্যাটি রয়েই যাচ্ছে বলে মত স্থানীয়দের। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
প্রশাসনের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে একশোর বেশি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে এসব এলাকায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখনো পাহাড়ধসের ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছেন।
চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখে শিমুলতলী এলাকা—একসময় শুধুই একটি পাহাড় ছিল। গত এক দশকে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থাপনা, যেগুলোর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৭ সালের পাহাড়ধসে এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল; বিধ্বস্ত হয় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। প্রাণ হারান ২০ জনেরও বেশি এবং আহত হন শতাধিক মানুষ। তবে প্রাণহানির পরও এই এলাকাতেই পুনরায় গড়ে তোলা হয়েছে বসতি।
শুধু শিমুলতলী নয়; শহরের ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, মোনঘর ও সনাতন পাড়া এলাকাগুলোর চিত্রও একই রকম। বারবার দুর্ঘটনার পরও এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেই স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হয়নি।
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলী বলেন, এভাবে বাস করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মৃত্যুঝুঁকি জেনেই থাকতে হচ্ছে। সরকার যদি কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে, তাহলে আমরা সেখানে চলে যাব।
রূপনগর এলাকার খোকন ও হামিদা পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর একই স্থানে আবারও নতুন বসতি গড়ে তুলেছেন। তাদের ভাষায়, অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। মৃত্যুর শঙ্কা জেনেও আমরা এখানেই থাকতে বাধ্য। সরকার শুধু জায়গা ছাড়তে বলে, কিন্তু কোথায় যাব—সেটা বলে না। তাই এখানেই থাকব, বাঁচলে এখানেই বাঁচব, মরলে এখানেই মরব।
যুব উন্নয়ন ও মনতলা আদাম এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র লাল চাকমা ও সোনা চন্দ্র চাকমা বলেন, প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে প্রশাসন এলাকা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে যায়। কিন্তু পাহাড়কে বসবাসের উপযোগী করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, জেলায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থায়ী পুনর্বাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় ভূমি ব্যবস্থাপনা জটিল হওয়ায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন। তবে ঝুঁকি কমাতে প্রশাসনের নানা উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে পাঁচজন সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৮ সালের জুনে নানিয়ারচরে পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে কাপ্তাইয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।
এসআরএস