ঢাকা, রবিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ মে ২০২৫, ২৭ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

পুশ ইন করা নারী-শিশুসহ ২১ জনকে পরিবারের জিম্মায় দিল প্রশাসন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৯, মে ২৪, ২০২৫
পুশ ইন করা নারী-শিশুসহ ২১ জনকে পরিবারের জিম্মায় দিল প্রশাসন

পঞ্চগড় সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের জয়ধরভাঙ্গা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ বড়বাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশে পুশ ইনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আটক নারী-শিশুসহ ২১ জনকে তিনদিনের মাথায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

 

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে পঞ্চগড় সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় দেন সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন।

এসময় পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহিল জামান ও হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলমের উপস্থিতি ছিলেন।

সরেজমিনে কথা হয় আটক থাকা আলেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভারতে বসবাস করে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এর মাঝে গত ২১ মে ভারতীয় পুলিশ আমাদের গুজরাট এলাকা থেকে আটক করে উড়োজাহাজে কলকাতা নিয়ে আসে। পরে কলকাতা থেকে বাসে করে এনে বিএসএফ সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এর পর বিজিবি আটক করে আমাদের। গত তিনদিন ধরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছিলাম সবাই। এর মাঝে আজ আমাদের পরিবারের সদস্যরা এসে আমাদের খুলনায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে, আজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।

একইসঙ্গে কথা হয় খুলনা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিতে আসা ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি পরিবার নিয়ে ভারতে থেকে কিটনাশক কোম্পানিতে কাজ করতাম। এর মাঝে আমাদের সবাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় ভারতীয় পুলিশ। পরে আমাকে আলাদা স্থানে নিয়ে সুন্দরবন দিয়ে নদীতে ছেড়ে দেয়। পরে সাঁতরে বাংলাদেশে আসি। এদিকে স্ত্রী সন্তানের কোনো খবর না পেলেও হঠাৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাদের ছবি দেখি।  

এদিকে পঞ্চগড়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ পরিবারকে নিতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে, সুস্থভাবে পরিবারকে ফেরত পেয়েছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) ভোরে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশ ইন করে বিএসএফ। এর পর এলাকায় তাদের দেখে স্থানীয়রা বিজিবিকে খবর দিলে বিজিবি তাদের আটক করে। পরে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে রাতে সবাইকে ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হলে তিনদিনের মাথায় তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হয়।

আটকদের মধ্যে ছয়জন নারী ও একজন পুরুষসহ সাতজন শিশু রয়েছে। তারা হলেন- খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের মাজিরগাতি এলাকার ইসরাইল ফকিরের স্ত্রী আলেয়া (৫৫), তার ছেলে রব্বিল ফকির (২২), পুত্রবধূ শিমলা (১৯), নাতনি আলিশা (৩), নাতি আয়ান (৩ মাস), একই এলাকার ইব্রাহিম ফকিরের স্ত্রী হেলেনা (২৭), মেয়ে রোজিনা (৮), ছেলে ইসমাইল (৫), উপজেলার গাজির হাট ইউনিয়নের গাজির হাট এলাকার ফরহাদ শেখের স্ত্রী স্বপ্না (২৯), ছেলে ফারজান (১২), মেয়ে আফসানা (৯), মরিয়ম (৩), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরা হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার আশিক সরদারের স্ত্রী রোজি (৩৯), তার ছেলে রানা (১৭), মেয়ে আয়েশা (৪), একই এলাকার আজির স্ত্রী শিমা (৩০), মেয়ে কুলসুম (১০), ছেলে রহমান (৬), রেহমান (৫), মেয়ে আফরিন (৩) এবং ছেলে রেহমাত আলী (২)।

এদিকে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই আলম বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ২১ জন আটক হওয়ার পর ইউএনও স্যার আমাকে ফোন করে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাখার জন্য বলেন। আমি তাদের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করি। আজকে তিনদিনের মাথায় তাদের অভিভাবক আসায় প্রশাসনের মাধ্যমে সবাইকে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশুসহ সবাই তাদের নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছে।

পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহিল জামান বাংলানিউজকে বলেন, আইনিভাবে আমরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছি, তারা বাংলাদেশি। এ বিষয়ে ঘটনার দিন থানায় জিডি করা আছে। আজকে তাদের পরিবারের সদস্যরা এলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যে সব কার্যক্রম রয়েছে তা সম্পন্ন করা হয়েছে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে আটক ২১ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়। এর মাঝে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা এলে আজ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।