ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মুক্তমত

বিএনপির ৪৭ বছর: প্রত্যাশা, অর্জন ও অঙ্গীকার

সাঈদ খান | সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
আপডেট: ০৮:৫৪, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫
বিএনপির ৪৭ বছর: প্রত্যাশা, অর্জন ও অঙ্গীকার

‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ সংক্ষেপে বিএনপি—এই নামের ভেতরেই রয়েছে এক অনন্য ইতিহাস, এক দার্শনিক ভিত্তি এবং এক মহৎ রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিশেষ করে ‘জাতীয়তাবাদী’ শব্দটি নিছক কোনো রাজনৈতিক পরিভাষা নয়, এটি এক আত্মপরিচয়ের আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তার বিকল্প রূপ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির সূত্র।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতি একদলীয় কর্তৃত্ববাদ, অস্থিরতা ও দমননীতির অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। তখন রাষ্ট্রকে কৃত্রিমভাবে একটি সংকীর্ণ পরিচয়ের খাঁচায় বন্দি করার চেষ্টা হয়েছিল, যেখানে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নামের একরৈখিকতা ধর্মীয়, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে প্রায় অস্বীকার করে।

এই একমাত্রিক চিন্তার বিপরীতে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। এটি কোনো অস্বীকারের রাজনীতি নয়, বরং ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজ বাস্তবতার সমন্বয়ে গঠিত বহুমাত্রিক রাষ্ট্রচিন্তা।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ স্বীকার করে—আমরা বাঙালি, কিন্তু তার আগে আমরা বাংলাদেশি। এই দর্শন চাকমা-মারমা, সাঁওতাল-মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান—সবার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দেয় এবং সমান অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে।

জাতীয় পরিচয় এখানে গঠিত হয় ভূখণ্ড, ইতিহাস, বৈচিত্র্য এবং জনগণের সম্মিলিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। জিয়াউর রহমান লিখেছেন এবং বলেছেন, ‘ভাষা যদি একটি ফুল হয়, ধর্ম আরেকটি ফুল। ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ফুল নিয়ে যে তোড়া বেঁধেছি—এটিই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। ’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই চেতনাকে ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছেন। তিনি বিভাজনের রাজনীতির পরিবর্তে ঐক্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নয়ন ও উৎপাদনের দর্শনকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি ১৯ দফা কর্মসূচিতে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, গৃহহীন ও কর্মসংস্থানসহ মৌলিক চাহিদার উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উদাহরণ স্থাপন করেন।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন একটি সংগঠিত ও আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। তাই তিনি প্রবীণ রাজনীতিকদের সঙ্গে সংলাপে যুক্ত হন; মধ্যপন্থী রাজনীতিক ও ভাসানীর উত্তরসূরিদের নিয়ে শুরু করেন বিকল্প শক্তি গড়ার কাজ।

এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল’, তারপর ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ এবং শেষে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’—১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর।

বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একদলীয় বাকশাল ভেঙে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন, উৎপাদনমুখী অর্থনীতি, কৃষি বিপ্লব, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিল্পোন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতি প্রণয়ন—সবই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলন-সংগ্রাম, আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মভিত্তিক রাজনীতির দিশা দলটিকে যুগোপযোগী ও অভিযোজনশীল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ধানের শীষ প্রতীক এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শন জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বই ‘দেয়াল’-এ (পৃষ্ঠা ১৯৩) লিখেছেন, ‘জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল, ইলিশ মাছ ধরা পড়ত। মানুষ মনে করল, তারা এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে, যিনি সৎ। নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য লুটপাটের চিন্তা ছিল না, দেশের উন্নতির চিন্তা ছিল। তিনি খাল কেটে দেশ বদলাতে চেয়েছিলেন। জিয়া লোক-দেখানো সৎ ছিলেন না, আসলেই সৎ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর জানা যায়, জিয়া পরিবারের কোনো সঞ্চয় ছিল না। ’

বিএনপির রাজনীতি কখনোই কণ্টকমুক্ত ছিল না। সামরিক অভ্যুত্থান, স্বৈরশাসনের দমননীতি, নেতাকর্মীর ওপর দমন-পীড়ন, নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাবরণ, তারেক রহমানের দীর্ঘ প্রবাসজীবন—সবই দলকে নানাভাবে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। কিন্তু বিএনপি কখনো হাল ছাড়েনি; গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

১৯৮০ সালে একটি কর্মশালায় জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেন, ‘ধর্মকে ভিত্তি করে রাজনীতি করা উচিত নয়। ধর্ম রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারে, তবে রাজনীতি কখনোই ধর্মের ভিত্তিতে হতে পারে না। ’ তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

বিএনপি ধর্মকে সমাজ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকার করে, অথচ রাজনীতিকে করে তোলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক। জিয়াউর রহমানের সেই বিখ্যাত উক্তি—‘আমরা বাঙালি, কিন্তু তার চেয়েও আগে আমরা বাংলাদেশি। ’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন; যার শক্তি জনগণের ঐক্যে নিহিত।

বিএনপি মধ্যপন্থার রাজনীতির বাহক। একদিকে এটি ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাজার অর্থনীতি ও নিরাপত্তার পক্ষে; অন্যদিকে কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্তের কল্যাণে সামাজিক দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপিকে গড়ে তোলে ভারসাম্যপূর্ণ ‘প্রগতিশীল-সংরক্ষণশীল’ শক্তিতে—যেখানে যুক্তি, সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনা সবই আছে।

দলের শক্তি নিহিত গ্রামীণ জনপদে, সাধারণ মানুষের অন্তরে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়ন, নারীশিক্ষা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির প্রসার—এসব অর্জন এখনো জনস্মৃতিতে জীবন্ত।

ভবিষ্যতের জন্য বিএনপির অঙ্গীকার সুস্পষ্ট: জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা, সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ, বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন সাধন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা। বিএনপি বিশ্বাস করে—প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির মাধ্যমে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

দলের দার্শনিকতার ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে চারটি স্তম্ভে—মানবিকতা, আত্মপরিচয়, সহনশীলতা এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব। বর্তমানের বৈশ্বিক সংকট ও গণতন্ত্রহীনতার প্রেক্ষাপটে বিএনপির এই দর্শন নতুনভাবে প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। ৪৭ বছরের পথচলায় বিএনপি গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাষ্ট্র সংস্কারের যে ভিত্তি স্থাপন করেছে, তা আজও জনগণের আস্থা ধরে রেখেছে। বিএনপি জাতীয় ঐক্য, সামাজিক সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতির এক সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা। এই দীর্ঘ যাত্রায় হাজারো নেতাকর্মী জীবন উৎসর্গ করেছেন—তাঁদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়ার শহীদ হওয়ার পর বিএনপি এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ঝড়ের মুখে পড়ে। ঠিক সেই অন্ধকার মুহূর্তে হাল ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি দলকে পুনরুজ্জীবিত করে জিয়াউর রহমানের উদ্ভাবিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে নবজীবন দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি গণমানুষের প্ল্যাটফর্মে রূপ নেয়, যা হয়ে ওঠে এক জাতীয় আন্দোলন। বিশেষত নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে তাঁর অবদান ছিল ঐতিহাসিক। প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নারীর অধিকার, শিক্ষা ও নেতৃত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। বাংলাদেশে নারীর সামাজিক অগ্রযাত্রার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে আরো সুসংগঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, নির্বাচন বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্যেও তিনি দলকে গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকে পরিণত করেছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক, নিপীড়িত জনগণের কণ্ঠস্বর।

জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদকে দেখতেন আধুনিক, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের উপায় হিসেবে, যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত হবে। বিএনপির ৩১ দফার দর্শন তাঁরই রাজনৈতিক দর্শনের ধারাবাহিকতা, যা উন্নয়ন ও উৎপাদনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রকাশ করে। এই দর্শন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারেক রহমান ‘সবার বাংলাদেশ’-এর নীতি ঘোষণা করেছেন। একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘুর পার্থক্য থাকতে পারে না। প্রত্যেক নাগরিকের সমান মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনি কেবল উত্তরসূরি নন; তিনি সময়ের দাবি অনুযায়ী দলকে আধুনিক রূপ দিয়েছেন। তাঁর দর্শন—অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্রের রূপরেখা। তিনি গণতন্ত্রকে দেখেন কেবল নির্বাচন হিসেবে নয়, বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনগণের অংশগ্রহণ-অংশীদারি হিসেবে, যা গণতন্ত্রের প্রাণ। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি হয়ে উঠেছে ছাত্র-তরুণ-যুবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য, আরো প্রাসঙ্গিক।

তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ৩১ দফা কর্মসূচি ও ভিশন ২০৩০ রূপরেখার মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য, শ্রমজীবীর সামাজিক সুরক্ষা, বেকার যুবকের কর্মসংস্থান এবং প্রান্তিক জনগণের অধিকারকে অগ্রাধিকার হিসেবে বাস্তবায়ন করবেন।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশে পরিবর্তনের শক্তি নিহিত জনগণের আত্মত্যাগে, আর সেই শক্তিকে রাজনৈতিক রূপ দিতে সক্ষমও হয়েছে বিএনপি। স্বাধীনতা (১৯৭১), মুক্তি (৭ নভেম্বর), স্বৈরাচারবিরোধী বিজয় (১৯৯০) এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণজাগরণ (২০২৪)—এই চারটি মাইলফলকই প্রমাণ করে, ইতিহাসে জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিএনপির পথচলা একাকার।

বিএনপি কেবল অতীতের স্মৃতিতে আবদ্ধ নয়, এটি ভবিষ্যতের রূপকল্পও। শহীদ জিয়ার রাষ্ট্রচিন্তা, খালেদা জিয়ার দৃঢ় নেতৃত্ব এবং তারেক রহমানের আধুনিক দর্শন মিলেই বিএনপিকে করেছে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানবিক ও গণমানুষের দল।

বিএনপির প্রতিশ্রুতি, যেখানে মুক্তি আছে, ন্যায্যতা আছে, আর আছে মানবিক মর্যাদার এক অঙ্গীকার। তারেক রহমানের ভাষায়—‘সবার বাংলাদেশ’ হয়তো সেই স্বপ্নই, যেখানে জনগণই হবে রাষ্ট্রক্ষমতার প্রকৃত মালিক।

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বিএনপির আবির্ভাব ছিল জাতীয় আত্মসচেতনতার পুনর্জাগরণ। এটি ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির বিভেদ ভুলে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। রাজনীতিকে শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং মানুষের সার্বিক মুক্তির মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য।

বিএনপি সেই দলের নাম, যা জনগণের আস্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করছে। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠা, আদর্শিক ভিত্তি, সাংগঠনিক কাঠামো এবং জনমুখী রাজনীতির প্রভাব অনন্য-অনাবদ্ধ।

যাঁদের নেতৃত্বে, যাঁদের আত্মত্যাগে, যাঁদের শ্রম, ঘাম ও মেধায় বিএনপি আজ দেশের জনগণের কাছে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভলগ্নে তাঁদের অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুগ্ম সম্পাদক কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।