প্রিয় স্যার,
আপনার ইন্তেকালের খবরে ভেতরটা শূন্য হয়ে গেছে। এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আপনি আর আমাদের মাঝে নেই।
এই চিঠিটা আমি লিখছি একরাশ কৃতজ্ঞতা, এক সমুদ্র দুঃখ, আর বুকভরা অপরাধবোধ নিয়ে। ১৫ জুন ২০২৫ রোজ রোববার আপনি চলে গেছেন—অকস্মাৎ, নিঃশব্দে। অথচ আপনি যে কী ছিলেন আমাদের জন্য, সেটার গভীরতা কেবল আপনিই বুঝতেন। আপনার চলে যাওয়ার খবরটা যেন ভেতরটা ছিঁড়ে দিলো।
আমার সাংবাদিক জীবনের প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে। আমি তখন কিছুই জানি না—কি লিখতে হয়, কোথায় শুরু করতে হয়, কীভাবে মানুষকে না কষ্ট দিয়ে সত্য বলা যায়—এসব কিছুর গন্তব্য ছিলেন আপনি। ‘শেয়ার বিজ’-এর নিউজরুমে কিংবা আপনার পাশে বসে লেখা সংশোধনের সময় আপনার প্রতিটি মন্তব্য ছিল আমার শেখার শ্রেষ্ঠ অধ্যায়। আপনি শাসন করতেন, কিন্তু সেই শাসনের ভেতর যে অগাধ ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, সেটা বুঝতে শিখতে আমার সময় লেগেছিল।
আপনি ছিলেন আমার শিক্ষক, আমার সম্পাদক, আমার গাইড। আবার কখনও হয়ে উঠতেন বন্ধু, পরামর্শদাতা, এমনকি পিতার মতো আশ্রয়। যখন হতাশ হতাম, আপনি বলতেন, “লিখো… সাহস করে সত্য বলো। ভয় পেলে সাংবাদিকতা তোমার জন্য না। ” আপনি শেখাতেন সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়—এটা এক ধরণের দায়বদ্ধতা, এক ধরনের লড়াই।
কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে, নিজের চোখের দিকে তাকাতে ভয় লাগছে। কারণ আমরা সবাই ব্যর্থ হয়েছি—আপনার শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারিনি। যখন আপনি দীর্ঘ সময় বাসায় কিংবা ডেল্টা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন, তখন আমাদের কারোরই সময় হয়নি আপনার পাশে গিয়ে চুপচাপ হাত ধরে বসে থাকতে। আমরা ভাবছিলাম, “সময় আছে”—আর সময়টা আমাদের জন্য অপেক্ষা করেনি। আজ যখন জানি আপনি আর নেই, তখন মনে হচ্ছে—আপনার জন্য আমাদের অনেক কিছু করার ছিল, যা আমরা করিনি। ক্ষমা করবেন স্যার, আমরা আপনাকে নিরাশ করেছি।
তবু আমরা জানি, আপনি ক্ষমাশীল ছিলেন। আপনি আমাদের ওপর যেমন ভরসা করতেন, তেমনি বিশ্বাস করতেন, একদিন আমরা ভালো কিছু করব। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখাই হবে আপনার প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।
আপনার প্রিয় শেয়ার বিজ কড়চা পত্রিকাটি আপনি গড়ে তুলেছিলেন অনেক কষ্টে, নিষ্ঠায়। আপনি শুধু প্রতিষ্ঠান গড়েননি, গড়েছিলেন মানুষ। আজ যেসব সাংবাদিকরা শেয়ারবাজার, বিনিয়োগ, অর্থনীতি নিয়ে লিখছে— তাদের একটা বড় অংশই আপনার হাতে গড়া। আপনি ছিলেন পথপ্রদর্শক, অগ্রদূত। সেই পথিক আজ নিঃশব্দে বিদায় নিয়েছেন—তবু আপনার ছায়া থাকবে আমাদের কলমে, আমাদের বিবেকে।
আজ আমরা আপনার জন্য প্রার্থনা করি—আল্লাহ যেন আপনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন, আপনার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর করে চিরশান্তিতে রাখেন। আপনার রেখে যাওয়া আদর্শ, মূল্যবোধ ও সাংবাদিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা আমরা হৃদয়ে ধারণ করে যাব।
আপনার শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না, কিন্তু আপনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের লেখা, চিন্তা ও বিবেকের মাঝে।
লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, বিজনেস জার্নাল