শিনজিয়াং অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ উইঘুর মুসলিমদের বাস। তবে ১৯৯০ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে।
বেকার তরুণ-তরুণীদের জন্য শিনজিয়াং প্রদেশের বিভিন্ন শহরে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রেনিং সেন্টার। আকেসু শহরের একটি ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৪৯৫ জন তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কী শিক্ষা দেওয়া হয় যুবকদের - এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রেবিগুল রামাতুলা জানান, উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকরা চীনা ভাষা জানে না। সে কারণে প্রথমেই তাদের চীনা ভাষা শেখানো হয়। চীনা ভাষা না জানলে চীনের মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা কঠিন। তাই চীনা ভাষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারপর চীনা সংস্কৃতি, চীনের সংবিধান শেখানো হয়। ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং দেওয়া হয় নয় মাস। তবে প্রথম দুই মাস ভাষা, সংস্কৃতি শেখার পর থেকেই তাদের পছন্দমতো কারিগরি শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করানো হয়। আপেল বাগান করা, সেলুন, ম্যাসাজ সেন্টার, বেকারি ও পেস্ট্রি ফুড ইত্যাদি কোর্স রয়েছে। আবাসিক এই কোর্স পুরোপুরি সরকারি খরচে করার সুযোগ দেওয়া হয়। এখান থেকে বেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন তারা।
শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর অধ্যুষিত হোতান শহরের আরো একটি ট্রেনিং সেন্টার ঘুরে দেখা যায় সেখানে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোর্স করছেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতেই জানান, তারা প্রত্যেকেই স্বেচ্ছায় এসেছেন। এখানেও সেলুন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হোটেলের হাউস কিপিং, মটর পার্টস মেকানিক, ডে কেয়ার সেন্টার ইত্যাদি কোর্সে অংশ নিচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম (২৫) জানান, তিনি এক সময় উগ্রবাদ মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। উইচ্যাটের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি জিহাদে অংশ নিতে প্রচারণা দিতেন তাকে। তবে তিনি জিহাদে অংশ নেননি। এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চান।
এভাবেই লাখ লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে চীন সরকার। কোনো যুবককেই বেকার রাখতে চান না তারা। অল্প শিক্ষিত যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করাতে চান। সে কারণেই সরকারি খরচে এমন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। প্রশিক্ষণ সেন্টারে থেকে বেরিয়ে যেন কাজে প্রবেশ করতে পারেন, সেই উদ্যোগও রয়েছে চীন সরকারের। সে কারণে কৃষি খামার, গার্মেন্টসসহ নানা কারখানাও গড়ে তুলছে। আর সেখানেই কাজ করছেন উইঘুর যুবকরা।
ট্রেনিং সেন্টার থেকে কোর্স করে এখন একটি জুতা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করছেন, আব্দুল ওয়ালী। শিনজিয়াং প্রদেশের হোতান শহরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ছোট্ট সাজানো গোছানো সংসার। বাড়িতে আধুনিকতার ছোঁয়া। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এখন তিনি মাসে ২ হাজার ইউয়ান বেতন পান। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তিনি খুব ভালো আছেন। তার স্ত্রী আলিয়াও জানালেন, তারা খুব ভালো আছেন।
চীনের দক্ষিণ শিনজিয়াং অঞ্চলে তিন বছরমেয়াদী ( ২০১৮-২০২০ ) কর্মসংস্থান পরিকল্পনা নিয়েছে চীন সরকার। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১ লাখ লোককে কাজ দেওয়া হবে। এর মধ্যে দারিদ্র্যপীড়িত পরিবার থেকে রয়েছেন ৭৫ হাজার লোক। এছাড়া ২০১৬-২০১৮ সালে শিনজিয়াংয়ের ৮৩ লাখ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছে দেশটি।
চীনা সরকারি কর্মকর্তারা জানান, যুবকদের কাজ দিতে পারলেই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা সহজ হবে। সে কারণেই কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে কর্মক্ষেত্র বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন শিল্প-কারখানা ও কৃষি খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এসব উদ্যোগ নেওয়ায় ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
টিআর/এএ