তিনি বলেন, তামাকের ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে এ জাতীয় পণ্যের মূল্য বাড়ানো। ধাপে ধাপে তামাকের কর বাড়িয়ে ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ঢাবির ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. রুমানা হক বলেন, কার্যকরভাবে কর বাড়ালে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও সহজলভ্যতা হ্রাস পায়। উচ্চমূল্য তরুণদের তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে। এছাড়া, বর্তমান ব্যবহারকারীদেরও তামাক ছাড়তে উৎসাহিত করে।
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কর বাড়লে প্রায ৩.২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ১২.৫ শতাংশে নেমে আসবে। বিড়ির ব্যবহার ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩.৪ শতাংশ হবে। ৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপির প্রায় ০.৪ শতাংশ) অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জিত হবে। এ অতিরিক্ত রাজস্ব তামাক ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাস, অকালমৃত্যু রোধ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে তামাক কর প্রস্তাবনা তুলে ধরে ড. রুমানা হক বলেন, সিগারেটের মূল্যস্তর ৪টি থেকে কমিয়ে ২টি নির্ধারণ করা, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং সব ক্ষেত্রে ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
তিনি বলেন, ২৫ শলাকা বিড়ির মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনিশ্চিত সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও ৪.৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
একইভাবে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে বিড়ি-সিগারেটের মতো খুচরা মূল্যের ভিত্তিতে কর আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা। প্রতি ২০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ড. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক জানান, বর্তমানে তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার ট্যাক্স পায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আর তামাক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। আর ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ। এছাড়া ই-সিগারেট ব্যবহার করে ০.২ শতাংশ মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, মাদকবিরোধী সংগঠন প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমদ, এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক (প্রশাসন) গাউস পিয়ারী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
টিএম/একে