ঢাকা, শনিবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ২৮ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

নুসরাতের ঘটনাকে আত্মহত্যা বানানোর অপচেষ্টাও হয়!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০২, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
নুসরাতের ঘটনাকে আত্মহত্যা বানানোর অপচেষ্টাও হয়!

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার পরপরই ঘটনাটি ‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। সোনাগাজী থানার প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের ‘ভাষ্য’ দিয়ে ‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রচারণায় ছিলেন একটি জাতীয় দৈনিকের সোনাগাজী প্রতিনিধিও। 

নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, এই ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালানো হয় `আত্মহত্যাচেষ্টা’ হিসেবে। এই অপপ্রচার ছিল `কিলিং মিশনের’ অংশ।

বিপুল অর্থের বিনিময়ে হয়েছিল অপপ্রচারটি হয়েছিল। যদিও ওই সাংবাদিকের দাবি, তিনি প্রত্যাহার হওয়া ওসির কথায় এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।

৬ এপ্রিল সকাল পৌনে ১০টার দিকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়া হয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই ওই সাংবাদিক তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘মাদ্রাসার ছাদে উঠে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সোনাগাজী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার নুসরাত জাহান নামের এক ছাত্রী। সকাল ১০টার দিকে ঘটে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শী…। ’ এই পোস্টটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফেসবুকজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা দেয় বিভ্রান্তি।

যদিও এরমধ্যে সবকিছুই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তবে রোববার (১৪ এপ্রিল) নুসরাত হত্যা মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর সব বিভ্রান্তিই উড়ে যায়। নুর উদ্দিন ও শামীম স্বীকার করেন, জেলখানা থেকে (মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা কারাবন্দি) হুকুম পেয়েই তারা নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারেন। শামীম সরাসরি হত্যায় অংশ নেন।

তবে নুসরাতের স্বজন ও সতীর্থরা বলছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর নুসরাত কয়েকদিন বেঁচেছিল বিধায় সে তাকে ঝলসে দেওয়ার কথা বলে যেতে পেরেছে। ঘটনাস্থলেই সে প্রাণ হারালে এই অপপ্রচারই পোক্ত হয়ে উল্টো নুসরাতের ওপর দায় চাপতো। তাতে পুরো ঘটনাটিই উল্টে যেতো।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যায়।

শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি ছিলেন সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। সিরাজ উদদৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে।

বাকি আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- সিরাজ উদদৌলা (৭ দিন), আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৫ দিন), জাবেদ হোসেন (৭ দিন), নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, আবছার উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের হোসেন (৫ দিন রিমান্ড)। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক হয়েছে সহপাঠী মো. শামীম ও জান্নাতুল আফরোজ মনি।

এদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িত পরোক্ষদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।  

এরইমধ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ায় সোমবার (১৫ এপ্রিল) সোনাগাজী থানার সেসময়কার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলাও তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/

** ঝলসে দেয়ার কথা জানতেন আ’লীগ নেতা রুহুল আমিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।