ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

‘মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিলো রাজীব’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২৮, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
‘মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিলো রাজীব’ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন রাজীবের মামা জাহিদুল

পটুয়াখালী: রাজীবের বাবা হেলাল উদ্দিন বাউফলের ইন্দ্রোকুলের বাসিন্দা। তবে দাসপাড়ায় তার শ্বশুরের দেওয়া ভিটে-মাটি রয়েছে। বরিশালের অপসোনিন কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বিয়ের পর থেকেই পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকতেন তিনি।

রাজীব যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তখন মারা যান তার মা আকলিমা বেগম। তখন তার ছোট ভাই মেহেদির বয়স ২ বছর আর আব্দুল্লাহর মাত্র ১০ মাস।

এমন পরিস্থিতিতে রাজীব ও তার ছোট দুই ভাইকে নিজ বাড়িতে এনে রাখেন নানা মোখলেছুর রহমান ও নানী পিয়ারা বেগম।

কয়েক বছরের ব্যবধানে রাজীবের বাবা, নানা-নানু সবাই মারা গেলে ছোটভাইদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন রাজীব। ভাইদের নিয়ে চলে যান ঢাকায় মেঝ খালার বাসায়। শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ। এমনটা জানিয়েছেন রাজীবের বড় মামা জাহিদুল ইসলাম।
রাজীবের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতমবাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাবা-মায়ের সাথে থাকার সুবাদে রাজীব বরিশালে কিছুদিন পড়াশোনা করেছে। কিন্তু বাবা-মা, নানা-নানী মারা যাওয়ার পর ঢাকায় ফকিরাপুল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে মেঝ খালা জাহানারা বেগমের কাছে চলে যান।

সেখানকার পোস্ট অফিস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিতুমীর কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। একইসঙ্গে ছোট দুই ভাইকে মিরাজিবাগ এলাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় রেখে পড়াশোনা করাতেন। ভাইদের এবং নিজের খরচ বহনের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি কখনো কম্পিউটারে কম্পোজ, গ্রাফিক্স ডিজাইন; কখনোবা টিউশনি করে উপার্জন করতেন রাজীব।
আরও পড়ুন: 
‘ভাই নেই, তার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই’
রাজীবের দুই ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেবে সরকার

কলেজছাত্র রাজীবের দাফন সম্পন্ন

জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, রাজীব স্বপ্ন দেখতো অনেক বড় হওয়ার। বাবা-মাকে হারিয়েও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে মাথা উচু করে বাঁচার চেষ্টা করেছিলো। অর্থ সংকটের কারণে বরাবরই মিতব্যায়ী ছিলো রাজীব। সে সর্বদা হিসেব কষে চলতো। ঈদে প্রয়োজন না হলে বাড়িতে আসতো না। ভাইদের খেয়াল রাখার জন্য মেঝ খালার বাসা থেকে মাদ্রাসার পাশের মেসে গিয়ে উঠেছিলো।

রাজীবের স্মৃতিচারণ করে প্রতিবেশী চান মিয়া বলেন, রাজীব এতটাই ভালো ছেলে ছিলো যা বলে বোঝানো যাবে না। রাজীবের চলে যাওয়ায় ওর ছোট দুই ভাই পুরোপুরি এতিম গেলো!

তবে রাজীবের দুই ভাইয়ের পাশে থাকা ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ জানিয়েছেন, সরকার রাজীবের পরিবারের পাশে রয়েছে, থাকবে।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বিআরটিসির একটি বাসের সঙ্গে স্বজন পরিবহনের একটি বাসের পীড়াপীড়িতে দুই বাসের চাপায় পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীবের।

তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সরকারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিলো। সোমবার (১৬ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজীব হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’র চিকিৎসকরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।