ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

উজ্জীবিত সূর্যের আলোকিত বার্তায় এবারের মঙ্গলশোভাযাত্রা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৫, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
উজ্জীবিত সূর্যের আলোকিত বার্তায় এবারের মঙ্গলশোভাযাত্রা  চারুকলায় আলোকিত সূর্যের প্রতিমূর্তি/ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বাংলা বর্ষ শুরু হবে, আর রাজা-রানি থাকবে না, তাই কখনো হয় নাকি! তবে শুধু কি রাজা-রানি; রয়েছে বাঘ, ট্যাপা পুতুল, বেড়াল, লক্ষ্মীপেঁচা, মাছসহ আরো অনেক কিছু। যা বাঙালির বাঙালিয়ানাকে তুলে ধরে শতভাগ। আর এ সবকিছু নিয়েই নতুন বছরে মঙ্গলবারতা আনতে এবার পালা মঙ্গল শোভাযাত্রার।

চৈত্রের শেষ দিনে শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে তাই ব্যস্ত সময় পার করছে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। শুধু কি চারুকলা, বাইরে শাহবাগ আর টিএসসি মোড়েও যেনো মেলা বসেছে।

সে মেলা থেকে থেকে রঙিন চুড়ি কিনছেন তরুণীরা। আর ফুল কিনে সেই চুড়ি কেনা তরুণীদের উপহার দিচ্ছেন বর্ষবরণে প্রস্তুত তরুণরাও।

সন্ধ্যায় শাহবাগে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীমা রহমানের সঙ্গে। দোকানির কাছ থেকে দু'ডজন নীল চুড়ি কিনেছেন তিনি। হাতে চুড়ি পরতে পরতেই আনন্দে বেশ উচ্ছ্বল হয়ে উঠলেন। তবে সে উচ্ছ্বলতা আরো বাড়লো, যখন তার খোঁপায় প্রিয় মানুষটি গুঁজে দিলো গোলাপি জারবেরা।

মঙ্গলশোভাযাত্রার জন্য সাজছে বাংলার ঐতিহ্যকথা হলে শামীমা বলেন, নতুন বছর এলো, তাকে তো সুন্দর করে বরণ করতে হবে। আর নিজে সুন্দর না হলে তাকে কীভাবে সুন্দর করে বরণ করবো! তাই এ শেষ সময়ে টুকটাক কেনাকাটা। একটা শাড়ি, নতুন চুড়ি আর কিছু ফুল।

এদিকে বৈশাখ উপলক্ষে কেনাকাটা করলেও প্রায় সবাই দুপুরের পর থেকে একবার করে ঢুঁ মেরেছে চারুকলা প্রাঙ্গণে। সেখানে এখনো চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সন্ধ্যায় প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় কিছু কাজ এখনো বাকি আছে মঙ্গল শোভাযাত্রার। তবে রাতের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

এ প্রসঙ্গে শোভাযাত্রা ১৪২৫ এর কার্যক্রমের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. আফি আজাদ বলেন, এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। তবে রাতের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এরপর আগামীকাল (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। এবার রঙের ক্ষেত্রে হলুদ কমলা ও লালকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

চলছে মুখোশ তৈরিমঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের স্লোগান নেওয়া হয়েছে মরমি বাউল সাধক সাঁইজি লালন শাহ থেকে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যে এবার নববর্ষে গাওয়া হবে আদর্শ মানুষ তৈরির জয়গান। পাশাপাশি উজ্জীবিত সূর্যের আলোতে আলোকিত করা হবে সবাইকে। শান্তির প্রতীক পায়রার মধ্যামে মানবতায় ছোঁয়ানো হবে শান্তির প্রলেপ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাতি, বক, মাছ, পুতুল ও বাইসাইকেলের বড় কাঠামোর আগে দেখা যাবে এ দুটি কাঠামো। আর এগুলো প্রান্তিক এলাকার কুমারদের ফোক মেটিফকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বলে জানান চারুকলার শিক্ষার্থী ও শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী শিমুল আহমেদ।

নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ন্রিয়া হয়েছে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভায়।

জমে উঠেছিল চুড়ি বিকিকিনিসিদ্ধান্তে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের তৈরি মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ।

নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারছে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।

পহেলা বৈশাখে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন ছবির হাটের গেট, বাংলা একাডেমির সামনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট, রমনা কালীমন্দির সংলগ্ন গেট ও বাংলা একাডেমির সামনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট ব্যবহার করতে হবে।

সবকিছু মিলিয়ে এখন শুধু অপেক্ষার পালা। আর বৃহৎ এ মঙ্গলযজ্ঞে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চারুকলা অনুষদ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্তরা।  

এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী অনাদীনি মগ্ন বলেন, আমরা সবার জন্য এ আয়োজন করছি নিজেদের নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। আমরা মনে করি মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের জীবনে মঙ্গল বয়ে আনবে। সে সুবাদেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানাবো এ মঙ্গলযজ্ঞে অংশগ্রহণের জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।