একসময় পহেলা বৈশাখ মানেই ছিলো বৈশাখী মেলা। মেলায় গিয়ে মাটির পুতুল, নানারকম খেলনা, কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা কেনা; বায়োস্কোপ আর নাগরদোলায় মাতামাতি।
সাধারণত বৈশাখের এক সপ্তাহ আগ থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। সে হিসেবে গত সপ্তাহ ছিলো বৈশাখী বেচাকেনার সময়। কিন্তু গত রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত বেচাকেনা প্রায় বন্ধই ছিলো। মূলত কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে ব্যবসায়ীদের বৈশাখী প্রস্তুতি ভণ্ডুল হয়ে যায়।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে সবচেয়ে বেশি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় গত বুধবার। অচল হয়ে যায় রাজধানী ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক। ফলে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা মোকামে না আসায় বেচাকেনাও এক ধরনের বন্ধ থাকে।
শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) নিউমার্কেট ও আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের একই কথা, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে বৈশাখী বেচাকেনায় ভাটা।
তবে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা জমে উঠেছে, তারপরও চারদিনের স্থবিরতা একদিনের বেচাকেনায় কাটানো সম্ভব নয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
নিউ মার্কেটের পোশাক ঘর লগন। এখানে বৈশাখ উপলক্ষে পাঞ্জাবি ও শাড়ি বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। সাড়ে ৭ থেকে ২৪শ’ টাকায় মিলছে পাঞ্জাবি। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় মিলছে শাড়ি। বৈশাখ উপলক্ষে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হয়েছে এ দোকানে। অথচ চারদিনে কোনো বেচাকেনা হয়নি।
লগন’র পরিচালক মোহাম্মদ রিপন বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে এবার আমাদের মাথায় হাত। যখন বেচাকেনা শুরু তখনই আন্দোলন। মানুষজন ঘর থেকে বের হয়নি। সেই ভয় এখনও আছে। চারদিন দোকান খুলতেই পারিনি।
একই অবস্থা আলিফ শাড়ি হাউজে। এখানে বৈশাখ উপলক্ষে এক থেকে তিন হাজার টাকা দামের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। বুটিকস, সিল্ক (লাল সাদা) ও কাতান (লাল সাদা) এর চাহিদা বেশি।
দোকানের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, কোটা আন্দোলনে আমাদের মাথায় হাত পড়েছে। আন্দোলন আরও আগে মিটে গেলে আমাদের জন্য মঙ্গল হতো।
শুধু নিউমার্কেট নয় অজিজ সুপার মার্কেটেও একই দশা। এখানের দোকানগুলোতে বৈশাখে গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলনের চারদিন কোনো বেচাকেনাই হয়নি।
আজিজ সুপার মার্কেটের আইডিয়াসের মালিক নিপা খান বলেন, অন্যান্য সময় দোকান ভাড়া ওঠে না। বৈশাখ ও রোজার ঈদের জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। কিন্তু এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে বড় ধরা খেলাম। চারদিন একেবারে বেচাবিক্রি হয়নি। আন্দোলনের প্রথম দিনে টিয়ারশেলের গন্ধে আমরা দোকানে বসতে পারিনি। ভয়ে ক্রেতাও আসেনি। অথচ এই চারদিনে আমরা ভালো বেচাকেনা করতে পারতাম। আমার বড় ক্ষতি হয়েছে এটা কাটিয়ে ওঠা খুবই কঠিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩,২০১৮
এমআইএস/জেডএস