ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

পাহাড়ে বৈসাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:৫০, এপ্রিল ১২, ২০১৮
পাহাড়ে বৈসাবি জলে ফুল ভাসিয়ে শুরু হয় পাহাড়ের উৎসব-ছবি-বাংলানিউজ

রাঙামাটি: পাহাড়ে বসবাসরত ১১টি জনগোষ্ঠীর ১০ ভাষা-ভাষীর মধ্যে চাকমারা বিজু, মারমা-রাখাইনরা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক, তংচঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিয়ারা (আসাম) বলে বিহু। আর এসবগুলোর সংমিশ্রণে বৈশাখী উৎসবকে বলা হয় বৈসাবি। 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পহেলা বৈশাখ এক নিয়মে উদযাপন করা হলেও পাহাড়ে উদযাপন করা হয় ভিন্নভাবে। চার দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসবে পাহাড় তখন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।

দেশের কোথাও পহেলা বৈশাখে এমন বৈচিত্র্য দেখা যায় না। আর এমন বৈচিত্র্য এ অঞ্চলকে আলাদা সত্তার সৌন্দর্য দান করে। এজন্য পাহাড়ের এমন বৈচিত্র্যের সুখ্যাতিতে মুগ্ধ হয়ে অনেক পর্যটক এ উৎসবে যোগ দিতে আগেই চলে আসেন।

ফুল বিজু 
পাহাড়ে বসবাসরত উল্লেখযোগ্য এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চৈত্রের (বাংলা) ২৯ তারিখ  (খ্রিস্টাব্দ ১২এপ্রিল) ভোরে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে নদীতে ফুল ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু এবং বিহুর সূচনা করবে। ওইদিন সকালে নদীতে ফুল ভাসানোর পর, বাড়ি-ঘর পরিচ্ছন্ন, ফুল দিয়ে বাড়ির আঙিনা সাজানো, অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য বাহারি রকমের ফলমূল সংগ্রহ, নানা ধরনের পিঠা-পুলি তৈরি, রান্না-বান্না করা, মদ সংগ্রহ এবং বিহারে গিয়ে ধর্মীয় উপাসনা করার মধ্যে ওইদিন ব্যস্ত সময় পার করে।  

এছাড়া বাড়ির বয়োঃজ্যেষ্ঠদের গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরানো এবং তাদের ভালো খাবার খাওয়ানো হয়।

জলকেলিতে মেতেছে তরুণ-তরুণীরামূল বিজু
চৈত্র মাসের ৩০ তারিখে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় ভোরে উঠে অতিথিদের আপ্যায়নের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ওইদিন সারাদিন অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া করানো, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দেখা করাসহ আনন্দে উল্লাসে দিন কাটায় ওইসব জনগোষ্ঠী। ওইদিন অতিথিদের মধ্যে বিশেষ খাবার পাজন (বিভিন্ন সবজি মিশ্রিত তৈরি খাবার) পরিবেশন করা হয়।  

এছাড়া বাড়িতে তৈরি পিঠা-পুলি, ফলমূল, অন্য খাবারসহ পাহাড়ি ঐতিহ্য মদ খেতে দেওয়া হয়।

গোজ্যাপোজ্যা
পহেলা বৈশাখের দিনটিকে চাকমা ভাষায় বলা হয় গোজ্যাপোজ্যা অর্থ্যাৎ বিশ্রামের দিন। ওইদিন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা সকালে উঠে মন্দিরে গিয়ে উপাসনা, নতুন কাপড়-চোপড় পরে ঘোরাঘুরি এবং দিন শেষে বিশ্রাম নেয়। এছাড়া ওইদিনও বাড়িতে বাড়িতে ভালো খাবার পরিবেশন এবং স্ব-স্ব গোষ্ঠীরা তাদের স্ব-স্ব নিয়ম-ভাষায় বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, নাচ-গানে দিন কাটায়।

জলকেলি 
নববর্ষের পরের দিন তথা মগ বা রাখাইন সম্প্রদায়ের মতে মারমা-রাখাইন জনগোষ্ঠী ওইদিন সকালে গৌতম বুদ্ধের মূর্তিকে স্নান করিয়ে মানুষের মধ্যে পবিত্রতার ছোঁয়া ছড়িয়ে দেয়। এরপর ওইসব জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা গ্রামে গ্রামে জলকেলির আয়োজন করে। জলকেলির (‘মিঠারী’ মারমা ভাষা) মূল কারণ হলো পুরাতন বছরের সব গ্লানি, দুঃখ-কষ্ট এবং সব অশুভ শক্তিকে বিদায় জানিয়ে মৈত্রীজালে বন্ধন সৃষ্টি এবং নতুন বছরে মঙ্গল কামনা করাই হলো এই জলকেলির উদ্দেশ্য। তবে জলকেলি কোনো ধর্মীয় উৎসব নয় এটি সামাজিক উৎসব। এ উৎসব বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন স্থানে করে থাকে।

এছাড়া জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পহেলা বৈশাখের দিনে পান্তা উৎসব, আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৮ 
আরএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।