ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি-খুনিদের বিচার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৬, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি-খুনিদের বিচার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জামায়তের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতারা।

সোমবার  (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে নাগরিক মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে দিয়ে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নুরের ওপর হামলা মানে জুলাই আন্দোলনের ওপর হামলা, আর সেটা মানে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর হামলা।

তিনি অভিযোগ করেন, এ হামলার সঙ্গে জাতীয় পার্টি সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট দোসররাও এতে সহায়তা করছে। তার দাবি, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে হবে।  

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেওয়া হয়, আর খুনীদের বিচার না হয়, তবে জুলাই যোদ্ধারা রাজপথে নেমে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, অনেকে জুলাইয়ের ঘটনাকে অভ্যুত্থান বলছে, কিন্তু এটা প্রকৃত অর্থে বিপ্লব। কারণ অভ্যুত্থান হলে শাসক পালায় না, কিন্তু এবার ফ্যাসিবাদী নায়িকা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ দেশেই ছিলেন, অথচ এবার শাসক বিদেশে পালিয়েছে। এটিই প্রমাণ করে, জুলাই ছিল একটি জনবিপ্লব। ”

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ছিল সংস্কার, কিন্তু সরকার কোনো সংস্কার না করেই নির্বাচনের পথে যাচ্ছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সুযোগ নেই। জনগণের ইচ্ছার ওপরই সরকারের বৈধতা নির্ভর করে। শেখ হাসিনা জনগণের ইচ্ছায় বিদায় নিয়েছেন, আর ইউনুস সরকার জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতায় এসেছে। তাই এই সরকার বৈধ। তবে বৈধতার জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে।

তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, সামরিক সরকার যদি পঞ্চম সংশোধনী বা সপ্তম সংশোধনী করতে পারে, তাহলে জনগণের সরকার কেন আইন করতে পারবে না? শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে ওই সংশোধনীগুলো বাতিল করেছেন, কিন্তু ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ কিংবা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করতে পারেননি। তাই জনগণের ভিত্তিতে তৈরি আইন সম্পূর্ণ বাতিল করা কখনোই সম্ভব নয়। জুলাই সনদ সংবিধানে যুক্ত হলে সেটি টিকে থাকবে শত বছর পরেও।

সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী ও দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ শামীম। তিনি বলেন, “ভারত মনে করে বাংলাদেশের অস্তিত্ব তাদের জন্য টিউমারের মতো। তাই তারা নানান ষড়যন্ত্র করছে। এখনো দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়। বরং দেশকে বিক্রি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জাতীয় ঐক্য জোটের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা আলতাফ হোসেন মোল্লা বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত যাচাই করতে হবে। জনগণ যদি চায়, তাহলে সরকারকে অবশ্যই  জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। গণভোট ছাড়া জনগণের মতামত যাচাইয়ের আর কোনো উপায় নেই।

বক্তারা একযোগে বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। ন্যায্যতা নিশ্চিত না হলে তারা একত্রে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী দলের মহাসচিব মো. হুমায়ুন কবির, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টির মহাসচিব মো. আলতাফ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

ডিএইচবি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।