বর্ষবরণকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নতুন জামা-কাপড় কেনা, পিঠা তৈরি, ঘর সাজানো, বৌদ্ধবিহারে ধর্মীয় গুরুদের জন্যে খাবার নিয়ে যাওয়া সর্বোপরি মৈত্রী পানিবর্ষণের বাধভাঙা উচ্ছাস, সব মিলিয়ে পুরো জেলার সবক’টি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন একাট্টা হয়েছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে।
পুরনো দিনের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুনের আয়োজনে এখন ব্যস্ত সবাই। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর এসব আয়োজনের সঙ্গে বাঙালিদের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে।
সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল সাংগ্রাই আবাহন বা মূল উৎসব উদযাপন করা হবে। এর আগে ১৩ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ উৎসবের সূচনা হবে। এতে জেলায় বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বান্দরবান জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থা, ম্রোচেটের সহায়তায় সাংগ্রাই উৎসব পালনে পাঁচ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোভাযাত্রা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও ১৪ এপ্রিল বুদ্ধ মূর্তি স্নান, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী পানিবর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের ১২ এপ্রিল ফুলবিঝু, ১৩ এপ্রিল মূলবিঝু ও ১৪ এপ্রিল নতুন বছরের আয়োজন করা হবে। তঞ্চঙ্গ্যারা ১২ এপ্রিল জেলার রেইছা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী ঘিলাখেলায় মেতে উঠবে।
এছাড়াও জেলা সদরের রেইছা, সুয়ালক, রাজবিলা, কুহালং এবং রোয়াংছড়ি, থানচি ও রুমা উপজেলায় আদিবাসী মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বৈসাবি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এছাড়াও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেবেন।
সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সভাপতি কো কো চিং মারমা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই মহাসমারোহে উদযাপিত হবে। এটি মারমা সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও জেলার বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের অংশগ্রহণে তা হয়ে ওঠে সার্বজনীন। এ উৎসবের মাধ্যমে বান্দরবানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে এটাই আমাদের কাম্য।
এ পানিবর্ষণ উৎসবের মধ্য দিয়েই মার্মা আদিবাসীরা বিদায়ী বছরের সমস্ত দুঃখ বেদনা, পারষ্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ধুয়ে মুছে ফেলে নতুন বছরের জন্য একে অপরের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে নেয়। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সপ্তাহব্যাপী মার্মা জনপদগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
আরএ