ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:০৪, এপ্রিল ৮, ২০১৮
বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পহেলা বৈশাখ হলো বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে আলিঙ্গন করার দিন। এ দিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দেয় নগর-গ্রাম-মফস্বলের সবস্তরের বাঙালি।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্ষবরণকে উৎসবমুখর করে তুলতে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের দেখা মেলে এ মেলায়।

তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব ঐতিহ্যের অনেকগুলোই। আর এই হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যগুলো যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছে ‘বাংলাদেশে জাতীয় জাদুঘর’।

জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে গ্রামীণ নির্দশনের এক বিপুল সমাহার। গ্যালারিতে প্রবেশ করলেই গ্রামীণ পরিবেশে বাংলাদেশকে তুলে ধরার অনেকরকম প্রচেষ্টার দেখা মিলবে। জানা যাবে বৈশাখী মেলার বিলুপ্ত প্রায় একটি আয়োজন জনপ্রিয় সাপ ও বানরের নাচ সম্পর্কে। বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে।  ছবি: বাংলানিউজএক সময় বাংলায় হাতির ব্যবহার ছিল প্রচুর। বর্তমানে পাহাড়ি এলাকা ছাড়া হাতি তেমন দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু মেলায় হাতি দিয়ে দর্শকদের আনন্দ দেওয়া হয়। তবে অতীতে বৈশাখী মেলায় হাতি ছিল অপরিহার্য। বৈশাখের বিভিন্ন চিত্রশীল্পের মাঝে প্রায়ই দেখা মেলে এ প্রাণীটির ছবি। জাদুঘরের ২১০ নাম্বার কক্ষে হাতির প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে গ্রামীণ মেলার আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন ধরনের মাটির হাড়ি, শিকা, পানের ডাবর ঢাকনা (ছোট গামলা বিশেষ), তালের টুপি, একতারা, পিঠার ছাঁচ, হরেক রকমের বাঁশিসহ হারিয়ে যেতে চলা নানা তৈজসপত্র । বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে।  ছবি: বাংলানিউজ২১১ নাম্বার কক্ষের এক কোণায় বৈশাখী মেলার পুরো চিত্র দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রাম বাংলার মেলাগুলো সাধারণত নদীর ধারেই আয়োজন করা হতো। তাই মেলা উপলক্ষে নদীর ঘাটে বাঁধা থাকতো সারি সারি নৌকা। পাশেই খোলা আকাশের নিচে বসেছে হাটবাজার। বিক্রেতারা বসে আছেন মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে। একপাশে রয়েছে নাগরদোলা ও বায়োস্কোপ।  গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক তালাপাতার তৈরি হাতপাখা। জাদুঘরে ১১ ধরনের হাতপাখা রয়েছে যা বর্তমানে তেমন দেখা যায় না। এসবের কয়েকটিতে আবার হাতে সেলাই করা কিছু প্রাচীন প্রবাদ স্থান পেয়েছে। একটিতে লেখা, ‘দিন যায় কথা থাকে, সময় যায় ফাকে ফাকে’।

এছাড়া বিভিন্ন আকৃতির মাটির ব্যাংক, পোড়ামাটির প্রদীপগাছা, মটকা, ছারি, ডাবর, কলস, পোড়ামাটির পুতুল, সাকিনা রহমানের পুতুল, রঙিন চুড়ি, নকশি কাঁথাসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে, যা গ্রামীণ ঐতিহ্যের গল্প বলে। বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে।  ছবি: বাংলানিউজএক সময় গ্রামের অধিকাংশ বাসায় ঢেঁকি ছিল। এর মাধ্যমে চাল থেকে আটা তৈরির মাধ্যমে নানান ধরনের পিঠা বানানো হতো। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্রের সাহায্যে অনেক সহজে ধান ভাঙা ও চালের আটা তৈরি হয়। ফলে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের ঐতিহ্য। জাদুঘরের তৃতীয় তলায় দেখা মিলবে বিভিন্ন ধরনের ঢেঁকি। জাদুঘরে কথা হয় কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা মানসুরা ইসলামের সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এসব ঐতিহ্য একসময় গ্রাম বাংলায় প্রায়ই দেখা যেতো। বর্তমানে অনেক কমে গেছে। নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে বাঙালির এসবের প্রতি নজর দেওয়া উচিত। বৈশাখের ঐতিহ্যের খোঁজে জাতীয় জাদুঘরে।  ছবি: বাংলানিউজজাদুঘরের পরিদর্শক কর্মকর্তা মো. মহসীন সরকার ও লাকী বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সংরক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ ঐতিহ্যগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এসকেবি/এএটি/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।