ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

‘ঘাতকদের খুঁজছে’ নিষ্পাপ রাইসার চোখ

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২৪, এপ্রিল ৭, ২০১৮
‘ঘাতকদের খুঁজছে’ নিষ্পাপ রাইসার চোখ রক্ষা পাওয়া রাইসার গলায় ঘাতকের নিষ্ঠুরতার চিহ্ন

সিলেট: বাসার দু’টি কক্ষে মা-ভাইয়ের মরদেহ। চারিদিকে কেবল রক্তের ছোপ। বন্ধ ঘরে দুর্গন্ধে পাঁচ বছরের শিশু রাইসার বেঁচে থাকাটাও ছিল আলৌকিক।

ঘাতকের ‘কালো হাতের’ আঁচড় পড়েছিলো তার শরীরেও। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে ফেরা রাইসা পরখ করেছে ঘাতকদের হিংস্রতা।

মা-ভাই খুনের ঘটনা এখনো তাড়া করে অবুঝ শিশুটিকে। হত্যাকারীদের চেহারা ভেসে ওঠে তার সম্মুখে! ভয়ে কুঁকড়ে যায় সে। দরজা বন্ধ করতে বলে, হাতের কাছে চাবি থাকলে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

তার নিষ্পাপ চোখে ভেসে ওঠে মা-ভাইয়ের খুনিদের প্রতিচ্ছবি! চোখে দেখলেও কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারছে না-তার এমন আচরণ থেকে উপলব্ধি পুলিশেরও।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে রাইসাকে। তার মানসিক অবস্থা উন্নতিতে সর্বদা হাসিখুশি রাখার চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাও চলছে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

জোড়া খুনের ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সে। তার মানসিক অবস্থা বুঝে খুনিদের শানাক্তে কৌশলে তার সহায়তা নিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও। হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হওয়ার পর থেকে তানিয়া নামে সেই নারীর সন্ধানে আছে পুলিশ। ওই নারীকে ঘিরে এবং গ্রেফতার হওয়া নাজমুলের তথ্যসূত্র ধরেই এগোচ্ছে মামলার তদন্ত।

এদিকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিরাপদে থাকলেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাঝেমধ্যে বিচলিত হয় শিশু রাইসা। পুরুষ দেখলে ভয়ে কেঁপে ওঠে-এই বুঝি তাকে মেরে ফেলা হবে!

তার সেবায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রোকেয়া খানম।

তিনি বলেন, হাতের কাছে চাবি থাকলে লুকিয়ে রাখে। দরজা খোলা রাখলে তা বন্ধ রাখতে অনুনয়-বিনয় করে। শিশু রাইসার মা রোকেয়া বেগমের নামে সঙ্গে মিল থাকায় এই পুলিশ কর্মকর্তা নিজে মায়ের আঁচলে স্থান দিয়েছেন শিশুটিকে।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর উদ্ধার অবস্থায় শিশুটির শরীর ছিল রক্তমাখা। শিশুটির গলা থেকে ঘাতকদের হাতের ছাপ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাকেও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাচেষ্টা হলেও জ্ঞান হারিয়ে বেঁচে যায় সে।  
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মা-ভাই হত্যার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী শিশু রাইসাকে থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে মানসিক পরিচর্যা করা হচ্ছে। শিশুটি যাতে ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে-এজন্য চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে। নিজ চোখে ঘাতকদের দেখলেও অবুঝ শিশুটি কাউকে কিছু বলতে পারছে না। তাই ছবি দেখিয়ে ঘাতকদের শনাক্তে চেষ্টা চলছে।  

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বাংলানিউজকে বলেন, ভিকটিম সেন্টারে রাখা হয়েছে রাইসাকে। সেখানে সে ভালো আছে। তার মানসিক অবস্থার উন্নতিতে যখন যা প্রয়োজন করা হচ্ছে।  

গত ১ এপ্রিল নগরের খারপাড়ার ‘মিতালী ১৫/জে’ নম্বর বাসা থেকে রোকেয়া বগেম (৪০) ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের (১৬) মরদেহ এবং নিহত নারীর শিশুকন্যা রাইসাকে (৫) রক্তাক্ত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিহতের স্বামী নগরের বারুতখানায় উত্তরণ ৫০ নং বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রী পান্না বেগমকে নিয়ে থাকেন।

২ এপ্রিল নিহতদের ময়না তদন্তে ওঠে আসে শরীরে ১০৮টি ধারালো অস্ত্রের কোপ। এরমধ্যে রোকেয়ার শরীরে ৭৬টি ও রোকনের দেহে ৩২টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন মিলে। পুলিশের ধারণা, পেশাদার খুনিরা ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে মা ছেলেকে। একাধিক খুনি অনেক সময় নিয়ে তাদের খুন করেছে।
 
ঘটনার দিন রাতেই দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোকেয়ার ভাই ব্যবসায়ী জাকির হোসেন অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ৩ এপ্রিল রাতে এ মামলায় নাজমুল নামে এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর ৪ এপ্রিল ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।