জীবনের প্রায় ষাট বছর এ পেশায় অতিবাহিত করেছেন তিনি। এখনও যমুনার বুকে মাছের আশায় রাত-দিন নৌকায় জাল ভরে চষে বেড়ান।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অনিক চন্দ্র বলেন, ‘বাবা আগের জামানা আর নেই। প্রায় ২৫ বছর আগে যমুনায় জাল ফেললে বোয়াল, চিতল, বাঘাইড়, রুই, কাতল ধরা পড়তো। একেকটি মাছের ওজন হতো ৩৫ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত। এখনও এসব মাছ জালে ওঠে। তবে ওজনে তেমন একটা বড় না। কিন্তু এখন অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছের দেখা মেলে যমুনায়। অবশ্য পরিমাণে তা সীমিত। বৃদ্ধ এ জেলের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নীল মনি, মনমতন, সঞ্চয়সহ বেশ কয়েকজন বাংলানিউজকে জানান, প্রায় আড়াই শতাধিক জেলে দিন-রাত মিলে দু’দফা যমুনায় মাছ ধরতে যান। এ কাজে ৭০-৭৫টির মতো শ্যালো মেশিন চালিত নৌকা ব্যবহার করা হয়। মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয় বেড়জাল, নাগিনী জাল, ঘাইলা জাল, মই জাল, ফাঁস জাল, কারেন্ট জাল ও বড়শি।
প্রত্যেক দিন বিকেল ৪ টার দিকে জেলেরা যমুনায় নামেন। মাছ ধরে ভোরে কাজীপুর উপজেলার মেঘাই খেয়াঘাটে চলে আসেন। ক্রেতা সাধারণ যমুনার মাছ কিনতে ভোর ৬ টার মধ্যেই সেখানে এসে হাজির। এরপর হাস্কা ভাও (মাপ ছাড়াই মাছগুলো বিক্রি করা হয়) ও নানা ধরনের বাসনে মাছগুলো রেখে জেলেরা ডাকাডাকি শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত ক্রেতার মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা পছন্দের মাছ কিনে নেন।
মাছ বিক্রি করে আবারও একইভাবে যমুনার নেমে পড়েন জেলেরা। মাছ ধরে আবারও দুপুর ২টার মধ্যে একই স্থানে বিক্রির জন্য চলে আসেন তারা। ক্রেতারা আগে ভাগেই পছন্দের মাছ কিনতে ভিড় জমান। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, শেরপুর, ধুনট, রায়গঞ্জসহ দূর-দূরান্ত থেকে যমুনার মাছ কিনতে ক্রেতারা নিয়মিত এখানে ছুটে আসেন। জেলে রুবেল, খোকন, জহুরুল, রমজান আলী বাংলানিউজকে জানান, এখানে বাশপাতারি, পাবদা, কাইয়াকাটা, ইলিশ, আইড়, বাঘাইড়, বোয়াল, ঘাইড়া, চিংড়ি, টাকি, ইটা, নন্দই, দারক্যা, রুই, কাতলা, শোল, চিতল, পাঙ্গাসসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তবে সব সময় একই প্রজাতির মাছ মেলে না। যা মেলে তাও চাহিদার তুলনায় সীমিত।
সময়ের ব্যবধানে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ যমুনা থেকে হারিয়ে গেছে। আর বর্তমানে যা ধরা পড়ছে তাও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কালের আবর্তে একদিন এসব প্রজাতির মাছের সিংহ ভাগ মাছ যমুনা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখন তাদের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাছের ওপর নির্ভর করতে হবে- যোগ করেন জেলেরা।
শাহিনুর ইসলাম, গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, এখানে আসলে বেশ কিছু প্রজাতির দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যমুনার মাছ মানেই স্বাদে অতুলনীয়। তবে দাম অনেক চড়া। কিন্তু করার কিছুই থাকে না। কারণ মাছের তুলনায় অনেক বেশি ক্রেতা এখানে মাছ কিনতে আসেন। তাই দামের প্রতিযোগিতা করে পছন্দের মাছটি কিনতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
এমবিএইচ/আরআইএস/