শনিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর-১, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কারওয়ান বাজার এলাকার খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়।
বাজারগুলোতে মাঝারি আকারের ইলিশ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং বড় ইলিশ ১৫৫০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাছ বিক্রেতা মফিজুল জানান, ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ তা জানি। কিন্তু বাজারে এর চাহিদা অনেক। আবার সামনে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্র করে দাম বেড়েছে। এর আগ পর্যন্ত রমজান কেন্দ্র করে বেড়েছে। এখন আমাদের কাছে জাটকার চালান এলে তো বেচবোই। বড় মাছের দাম অনেক বেশি হওয়ায় আর জাটকার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ক্রেতারা জাটকাটাই বেশি পছন্দ করছে।
একই মত অন্য এলাকার খুচরা মাছ বিক্রেতাদেরও। শেওড়াপাড়া এলাকার খুচরা মাছ বিক্রেতা ইলিয়াস জানান, চালান এখন অনেক কম। দাম একারণেও বাড়ছে। আর মাছ পেলে সেটা বড় হোক আর জাটকাই হোক- আমরা তো বেচবোই। রেস্টুরেন্টসহ পহেলা বৈশাখ কেন্দ্র করে মৌসুমী খাবার ব্যবসায়ীরা ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে রাখছেন পহেলা বৈশাখের জন্য। সাধারণ ক্রেতাদের ইলিশ কিনতে খুব কমই দেখা যায়। কারণ দাম বেশি।
এ কথার প্রমাণ মিলেছে খুচরা বাজারগুলোতে গিয়ে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মিরপুর-১ নম্বরের মাছের আড়তে ইলিশ মাছ চোখে পড়লেও খুচরা বাজারগুলোতে বাজারে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যেতে দেখা গেছে।
মিরপুর-১ এলাকায় বাজার করতে আসা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ইশতিয়াক পারভেজ জানান, বাসা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যেতে বলেছে। পারলে ইলিশও নিতে বলেছে। কিন্তু যে পরিমাণ দাম তাতে কিনতে চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এতোদিন রমজানের জন্য বেড়েছে আর এখন বাড়ছে পহেলা বৈশাখের জন্য।
কাজীপাড়া কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা আফরিন খানম বাংলানিউজকে বলেন, সরকার নিয়ম করছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন কে করবে? সঠিক নজরদারি নেই বলেই বাজারে এখনও জাটকা চোখে পড়ে। যদিও পরিমাণে অনেক কম থাকা থেকে বোঝা যায় কিছুটা কড়াকড়ি মাছ ধরার ক্ষেত্রে রয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারগুলোতেও যদি একটু মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে এটা সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব হতো।
দামের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম এদেশে যে কোনো কারণ দেখিয়ে বাড়বে তা আমাদের স্বাভাবিক স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রেও একই কথা। কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এটা নিয়ন্ত্রণ তাদের সদিচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয়। আমার দেখা মতে সাধারণ ক্রেতারা ইলিশ মাছ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আগের মতো ইলিশ খাওয়ায় রেওয়াজও কমে গেছে। তাও তো দাম বাড়ছে।
নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি বা তার চেয়ে কম আকারের ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ আছে উল্লেখ করে মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, জাটকা ধরা ধরা বন্ধ আছে। এ ব্যাপারে নদীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে আমাদের মনিটরিং সেল রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ৬টি টিম পরিচালিত হচ্ছে। যারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন। আমরা নিজেরা করতে পারছি না, কারণ আমাদের জনবল সীমিত। এছাড়া প্রতিটি বাজারে তো চেকিং বুথ বসানো সম্ভব না। এক্ষেত্রে আমাদের ভোক্তাদের সচেতনতাই মুখ্য।
জাটকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ভুল আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনেকে মাছের মাথা থেকে পাখনার শুরু পর্যন্ত মেপে বলেন জাটকা। কিন্তু মাপতে হবে পাখানার শেষ মাথা পর্যন্ত। এভাবে অনেকে বলেন বাজারে জাটকা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
এমএএম/এএ