শুক্রবার (০৬ এপ্রিল) দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল আকন্দসহ ১০ জনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আটককৃত অন্যরা হলেন- জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, নাদিমুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্নব চক্রবর্তী ও আরিফুর রহমান ওরফে শাহীন।
তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আটককৃত তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তা জালিয়াতির মাধ্যমে সম্প্রতি ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েছেন। তারপর তারাও বৃহৎ পরিসরে এই জালিয়াতি শুরু করেন।
‘চক্রটি মূলত বিভিন্ন ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা, বিসিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিলো। সম্প্রতি অনার্সের ইংরেজি পরীক্ষায় রাজবাড়িতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন এবং এইচএসসি পরীক্ষাতেও এটি শুরুর চেষ্টা করছিলেন তারা’।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি আবু জাফর মজুমদার এ চক্রের অন্যতম সদস্য উল্লেখ করে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, এর মূলহোতা পুলকেশ দাস নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয় দেন। কিন্তু আসলে জালিয়াতিই তার একমাত্র কাজ। তিনি তার বিশ্বস্ত সহযোগী কার্জনের সহযোগিতায় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো সংগ্রহ করেন।
চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সাধারণত শুক্রবার হয়। পরীক্ষাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় আসেন এবং পান্থপথে একটি রুমে মিলিত হন। পরীক্ষার দিন ওই রুম থেকেই প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করা হয়।
জালিয়াতি প্রক্রিয়ার বিষয়ে ডিবির উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ক্রেডিট কার্ডের মতো দেখতে একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস তারা নিজেরা তৈরি করেন। এর ভেতরে সিমকার্ড প্রবেশ করানো যায় এবং কল রিসিভ করা যায়। তবে ঐ ডিভাইস থেকে কল করা যায় না।
পরীক্ষার আগে যেসব পরীক্ষার্থী চুক্তিবদ্ধ হবেন তাদেরকে এই ডিভাইস সরবরাহ করে চক্রটি। এর সঙ্গে ছোট একটি ইয়ারফোন থাকে। তারা হলে প্রবেশ করার পর বাইরে থেকে চক্রের সদস্যরা প্রশ্নের সমাধানগুলো বলতে থাকেন এবং হলে সেসব পরীক্ষার্থীরা ইয়ারফোনের মাধ্যমে শুনে উত্তর দিতে থাকেন।
প্রশ্নপত্র কীভাবে ঐ চক্রের কাছে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ছাত্র আছে যাদের পরীক্ষা দেওয়ার বয়স আছে, কিন্তু ছাত্র ভালো না। তাদের মধ্য থেকে একজনকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হলে প্রবেশ করানো হয়। ডিভাইসের মাধ্যমে বলে বা যে কোনোভাবে প্রশ্নটা বাইরে পাঠানোই তার দায়িত্ব। প্রশ্ন পাওয়ার পর কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মিলে এর সমাধান করে টার্গেট পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করতো তারা।
পুরো প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা নিতো বলেও জানান তিনি।
এর আগে শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, এই চক্রে ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও জড়িত।
তাদের মধ্যে কেউ ডিভাইস তৈরি করেন, কেউ টার্গেট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করেন, কেউ প্রশ্ন সমাধান করেন।
এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ঠেকানো গেছে। এজন্য এই চক্রটি তাদের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিলো।
আটককৃত ১০ জনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান আব্দুল বাতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
পিএম/জেডএস