ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

আইনজীবী রথীশের টাকার হদিস মিলছে না!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৫, এপ্রিল ৬, ২০১৮
আইনজীবী রথীশের টাকার হদিস মিলছে না!

রংপুর: রংপুরের বিশেষ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ‘বাবু সোনার’ ব্যাংক হিসাব থেকে উঠানো দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) খুন হওয়ার আগে তিনি এই টাকা তুলেছিলেন।

স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়ে খুন হওয়ার পর পুলিশের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। আর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই টাকার কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।


 
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে নগরীর আশরতপুর এলাকায় রথীশ চন্দ্রের পিসি বীনা বানি ভৌমিকের একটি জমি বিক্রির চুক্তিপত্র হয়। আবদুস সালাম নামে রংপুর কারমাইকেল কলেজের এক গাড়িচালক ৪০ লাখ টাকায় জমিটি কেনেন। বায়না হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দেন তিনি। ওই পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখা হয়। এর মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছিলেন রথীশ চন্দ্র। কিন্তু সেই টাকার কোনো হদিস পাচ্ছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।  

কোনো খাতে সেই টাকা ব্যয় হয়েছে, না-কি স্ত্রী স্নিগ্ধা সেই টাকা তার প্রেমিক কামরুল ইসলামকে দিয়েছেন সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাজহাট স্কুলে প্রায় ২৫ বছর ধরে চাকরি করছেন রথীশ চন্দ্রের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক। এ সময় একই স্কুলের শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্ক থাকায় স্নিগ্ধা ভৌমিক প্রায়ই কামরুলকে মোটা অংকের আর্থিক সাহায্য করতো। আর এসব টাকার হিসাব নিয়ে রথীশের সঙ্গে তার স্ত্রী স্নিগ্ধার মাঝে মধ্যে কথা কাটাকাটিও হতো।  

প্রেমের সম্পর্কের কারণে সিগ্ধা ওই টাকা কামরুলকে দিতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বামীর সঙ্গে স্নিগ্ধার কথা কাটাকাটির জেরে রথীশ খুন হতে পারেন বলেও বিষয়টি আমলে নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখছে পুলিশ।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের মুখে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য।  জানা যায়, অব্যাহত শৃঙ্খলা-বিরোধী কাজের কারণে গত ৪ মার্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সভাপতি রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নির্দেশে তিনটি বিষয় উল্লেখ করে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয় কামরুল ইসলামকে। তিনি নোটিশের জবাব দেন। সেই জবাব নিয়ে গত ১৯ মার্চ কলেজ পরিচালনা কমিটির বৈঠক বসে। বৈঠকে জবাব পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক না হওয়ায় কামরুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য অভিভাবক সদস্য বিপুল সরকারকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করে দেন অ্যাডভোকেট বাবু সোনা। গত ২৮ মার্চ স্কুলে দুপুরে ওই কমিটির কাছে সরাসরি নোটিশ ও জবাবের বিষয়ে কথা বলেন কামরুল। এক পর্যায়ে ভুল স্বীকার করেন। বিষয়টি খুবই খারাপভাবে নেন কামরুল ও স্নিগ্ধা ভৌমিক। কামরুলকে নোটিশ এবং নোটিশের জবাব প্রাপ্তির পর কমিটি করে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় স্নিগ্ধা ভৌমিক খুব নাখোশ হন রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ওপর। এনিয়ে কথাকাটাটিও হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে।

সূত্র মতে, কামরুলের সঙ্গে দীপার অবাধ প্রেম ও অসামাজিক কার্যকলাপ এবং স্কুলে কামরুলের অবৈধ হস্তক্ষেপে দীপার সমর্থন ও কামরুলকে কারণ দর্শাও নোটিশ নিয়ে পারিবারিক বিরোধ তুঙ্গে উঠে। বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতার জন্য ৩০ মার্চ রাতে পারিবারিক সালিশের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কামরুলের স্কুলের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার পরের দিন এবং দীপার সঙ্গে পারিবারিক সালিশের আগেই দিন ২৯ মার্চেই (বৃহস্পতিবার)  নিজ বাড়ির নিজ শোয়ার ঘরে দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম বাবু সোনাকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

নিখোঁজের বিষয়টি প্রকাশ পেলে রংপুরে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের মুখে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম ঢাকা থেকে রংপুর আসে। সে সময় আইনজীবীর স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক নিখোঁজ রথীশ চন্দ্রের ফোন সকাল ছয়টা থেকে বন্ধ থাকার কথা জানায়। কিন্তু র‌্যাব রাত থেকে তার ফোন বন্ধ থাকার বিষয়টি বুঝতে পেরে স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের উপর সন্দেহবশত ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে সহকর্মী স্কুলশিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে দিনের প্রায় সময়ই তাদের দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ ফোনালাপের তথ্য পায়। এরই সূত্র ধরে কামরুল মাস্টারকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিককে গ্রেফতার করে। আর নিখোঁজের পাঁচদিন পর (৩ এপ্রিল) রাত ২টার দিকে রংপুর কোতয়ালি থানার তাজহাট মোল্লাপাড়ায় নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) রথীশ চন্দ্রের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক, স্ত্রীর প্রেমিক কামরুল মাস্টার, গাড়িচালক মিলন, দুই কিশোর সবুজ ও রোকনুজ্জামান ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এবং স্ত্রীর প্রেমিক কামরুল মাস্টারকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, ‘ওই টাকার খোঁজ করছে পুলিশ। আশা করছি এই তথ্যও আমরা পেয়ে যাবো’।

সার্বিক বিষয়ে রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল মিয়া বলেন, মামলাটিতে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আমরা সব বিষয় গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৮
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।