এবার পরিচ্ছন্ন নগর গড়ে তোলাকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাসা-বাড়ি থেকে প্রতিদিন নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ, ড্রেন পরিষ্কার রাখা ও এলাকাভিত্তিক ময়লার ভাগাড়গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের নেওয়া এসব পদক্ষেপের কারণে নগরীর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় নগরবাসীকে। তবে তারা মনে করেন, ‘পরিচ্ছন্ন নগর’ উপহার দিতে আরও অনেক সময় লাগবে ডিএসসিসি’র। সেইসঙ্গে পার করতে হবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ।
সরেজমিন দেখা যায়, ডিএসসিসি’র বিভিন্ন এলাকার অনেক স্থানে এখনও ময়লার স্তূপ। ময়লা ফেলার কন্টেইনারগুলোর কোনো কোনোটির আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আর্বজনা। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কন্টেইনারগুলোর সঙ্গে নির্মাণ করা হচ্ছে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। প্রতিটি এসটিএস’তে ৫ থেকে ১০টি কন্টেইনার রাখা যাবে, যা নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ময়লা আবর্জনা যাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না থাকে, সেজন্য রাজধানীতে ৯টি এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আরও ৬-৭টি। নির্মাণ কাজ শেষ হলে পুরো দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতা দৃশ্যমান হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
এই মৌসুমে মশার উপদ্রব বাড়ার কারণে গত ২১ মার্চ থেকে সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি। বর্ষাকাল সামনে রেখে জলাবদ্ধতা নিরসনে এ কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকার ড্রেন, ডোবাগুলোও পরিষ্কার করা হয়েছে।
আজিমপুর, হাজারীবাগ, ফকিরাপুল, বেইলি রোড, বাংলামোটর, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে ডিএসসিসি’র পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সফলতার চিত্র পাওয়া যায়। এসব এলাকার ময়লার কন্টেইনার, ড্রেন ও রাস্তাঘাট বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়।
কলাবাগান লাজ ফার্মার বিপরীতে ময়লার কন্টেইনারগুলোর উপচেপড়া আর্বজনার কারণে দুর্গন্ধময় পরিবেশ নাকে ভেসে আসে। এলাকাবাসীকেও বিরক্তি নিয়ে নাক চেপে এ পথে চলাচল করতে দেখা যায়।
কলাবাগানের বাসিন্দা নাঈম ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ পথে চলতে নাকে রুমাল দিতে হয়। বর্জ্যের পচা গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। তবে আগের থেকে আমাদের এলাকা অনেক পরিচ্ছন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ধানমন্ডি আইয়ুব রোডের বাসিন্দা জহিরুল বলেন, আগে নিউমার্কেট থানার পাশ দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটা যেতো না। সেই নিউমার্কেটের পেছনের দিকটা ঝকঝকে-তকতকে হয়েছে। আসলে সিটি করপোরেশন চেষ্টা করছে, সবাই সহযোগিতা করলে ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে।
ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ ও কলাবাগান এলাকার গৃহস্থালির ময়লা সংগ্রহ করেন ভ্যানচালক সাদ্দাম। তিনি বলেন, সকালে ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করে এখানে রাখি। আগে বাসা বাড়ির লোকজনের অনেক অভিযোগ ছিলো ময়লা আর্বজনা না নেওয়া নিয়ে, সে অভিযোগ এখন নেই। কারণ আমরা প্রতিদিন ময়লা সংগ্রহ করি। কলাবাগানে ময়লার স্টেশনটা তৈরি শেষ হলেই আর রাস্তায় ময়লা থাকবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন নগরীর ময়লা-আবর্জনা অপসারণে ডিএসসিসি চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু পুরোপুরি সফল হতে সময় লাগবে। পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা উন্মুক্ত ময়লার কন্টেইনারগুলো সরাতে বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন তৈরি করছি। আশা করি এগুলো তৈরি শেষ হলে পরিচ্ছন্নতার কাজটা অনেক এগিয়ে যাবে। আমাদের কর্মীরা নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। মেয়র নিজে সব তদারকি করছেন। ড্রেন, জলাশয়গুলো পরিষ্কার করার কারণে এবার জলাবদ্ধতা কম হবে।
রাজধানীতে দৈনিক যে পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা উৎপন্ন হয় তা দ্রুত অপসারণে জনবল ও প্রযুক্তির কিছুটা সঙ্কটও রয়েছে। এরপরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮
এমসি/জেডএস