তার ওপর এখানকার কলকারখানা গুলোর দুষিত বর্জ্য এর মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখানকার প্রতিটা ডোবাই যেন মশার প্রজনন কেন্দ্র।
শীত শেষ হবার পর থেকেই রাজধানীতে মশা একটি আতঙ্করূপে দেখা দিয়েছে অনেক এলাকাতেই। তার মধ্যে অন্যতম রাজধানীর এক প্রান্তে অবস্থিত এই বসিলা।
শুক্রবার (৩০ মার্চ) বসিলা এলাকা ঘুরে ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে এমন চিত্র।
এদিকে বসিলার পাশ ঘেঁষেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি দুষণ কবলিত বুড়িগঙ্গা নদীর একাংশ। ছোট খালগুলোতে উৎকট গন্ধযুক্ত কালো পানির প্রবাহ রয়েছে। এ এলাকায় শিল্প কল-কারখানার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তার বর্জ্য পদার্থ মিশে ডোবাগুলোর অবস্থা আরও দুঃসহ হয়ে উঠছে।
বসিলার এলাকার মুদি দোকানদার মুরাদ জানান, শুধু সন্ধ্যা-রাতে নয় দিনের বেলাতেই মশার যে তীব্র যন্ত্রণা তাতে ঘরে বসে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। কতক্ষণইবা মশারির ভেতর বসে থাকা যায়। মশার কয়েল, স্প্রে বা যে কোনো ধরনের প্রতিরোধক ব্যবহার করেও মশা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয় না। একমাত্র উপায় মশা মারা ইলেকট্রিক ব্যাট। প্রত্যেকটি ঘরে সবার হাতে হাতে এখন ব্যাট দেখা যায়। আর সারাদিন শুধু মশা মারার ঠুস-ঠাস শব্দ।
বসিলা এলাকার বাসিন্দাদের আরেকটি আক্ষেপ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। এখানকার বাসিন্দাদের জন্য তা কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক বা হাসপাতাল নেই। সে ক্ষোভ জানিয়ে এলাকার বাসিন্দা অব্দুল কাসেম জানান, গতবার চিকুনগুনিয়ার সময় আমাদের এখানে অনেক রোগী ছিল। আমি নিজেই তার ভুক্তভোগী ছিলাম। যদিও এ এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। আমাদের কষ্ট করে মোহাম্মদপুর যেতে হয়। আর চিকুনগুনিয়ার মতো বাজে রোগ বহন করে এক পা ফেলাও খুব কষ্টকর। তাও আমাদের চিকিৎসা নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আর গতবার এই এলাকায় যে পরিমাণ মশা ছিলো তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ মশা রয়েছে এবার। এবার যে আমাদের কি হবে সে বিষয়ে আমরা চিন্তিত ও আতঙ্কিত।
ঢাকার মধ্যে এটি একটি দ্বীপ এলাকা উল্লেখ করে এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী রজব আলী জানান, আমরা এ এলাকায় সিটি করপোরেশনের লোকজনদের আসতেই দেখি না। মশার ওষুধ দেয়া তো দূরের কথা এ এলাকার উন্নয়নমূলক কাজেও তাদের পাওয়াটা খুব কষ্টকর। এটা রাজধানীতে অবস্থিত হলেও রাজধানীর একটি নজরহীন দ্বীপ এলাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কীট কর্মকর্তা মোহাম্মদ অলম শরিফ খান বাংলানিউজকে জানান, মশা নিধনের জন্য ওষুধসহ সব যন্ত্রপাতি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে দেয়া থাকে। এমনকি এ কাজের জন্য শ্রমিকও তিনি নিয়োগ দেন। এ নিয়ম প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক থাকতেই করে গিয়েছিলেন। আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছি, বাকিটা তাদের হাতে।
কিন্তু যুক্তি খণ্ডন করে ডিনসিসির ৩৩ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব বাংলানিউজকে জানান, মশার ওষুধ প্রতিনিয়ত ছিটানো হয়। এই ৩৩ নং ওয়ার্ডটি অনেক বড় একটি ওয়ার্ড। আমরা প্রতিদিন নিয়মানুসারে মশার ওষুধ ছিটাই। তবুও এক একটি এলাকায় একবার ছিটানোর পর পুনরায় আসতে ৫ থেকে ৬ দিন সময় লাগে। একারণে এলাকার লোকজন আমাদের দেখে না বলে অভিযোগ করে। তারা চায় আমরা অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোর মত প্রতিদিন যাই। কিন্তু এতো বড় ওয়ার্ড ও সে অনুসারে লোকবল কম হওয়ার কারণে আমাদের তা সম্ভবপর হয় না। আবার প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক মশার ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে যে বড় সিন্ডিকেটের জন্য নিম্নমানের ওষুধ সাপ্লাইয়ের বিষয়ে আফসোস করে গেছেন। আমরা সে সিন্ডিকেট ভেঙে ভালো মানের ওষুধ এখন পাচ্ছি।
তারপরও মশা কেন কমছে না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে যে পরিমাণ মশা তাতে এই ওষুধ দিয়ে মারাটা সম্ভব না। তাই মশার বংশবৃদ্ধিকে নষ্ট হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে হবে। মশার লার্ভা নষ্ট করার জন্য আমরা ডোবা-নালা ও খাল সংস্করণের কাজে নামলেও আইনি জটিলতায় পড়ে গেছি। কারণ খালের মালিক সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা কাজ করতে পারি না। আর মশার প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংস করতে না পারলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ