ঢাকা, শনিবার, ৮ ভাদ্র ১৪৩২, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ২৮ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

যশোর রোডের গাছ নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে দুই মন্ত্রণালয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৫৯, মার্চ ৩০, ২০১৮
যশোর রোডের গাছ নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে দুই মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত যশোর রোড/ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য যশোর-বেনাপোল রোড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এশীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গেও যশোর-বেনাপোল একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। 

মহাসড়কটির উপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রাফিক বিবেচনায় এটি প্রশস্তকরণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ২০১৭ সালের ২১ মার্চ ৩শ’ ২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা ছিল।

সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগুতে থাকে কিন্তু বাদ সাধে মহাসড়কে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ৭০২টি শতবর্ষী গাছ। প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের সময় দুই পাশের শতবর্ষী গাছ অপসারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। সরব হয়ে ওঠেন পরিবেশবিদরা। শেষ পর্যন্ত গাছ কাটার বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমেদ উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ১৮ জানুয়ারি ৬ মাসের জন্য গাছ কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এরপর সিদ্ধান্ত হয় আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মহাসড়কটি চলাচল উপযোগী করতে অন্তক সংস্কার করার। এজন্য ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। তবে কাজটি ২৭ কোটি টাকার হবে নাকি ৩২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার হবে এনিয়ে ধন্দে পড়ে যায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।  

মহাসড়কটির বাস্তব অবস্থা নিরীক্ষণে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির ৪ সদস্য দিয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে রয়েছেন, এ কে এম এ আউয়াল (সাইদুর রহমান), নাজমুল হক প্রধান, মনিরুল ইসলাম। সাব-কমিটি ২৩ মার্চ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে। সাব কমিটি ২৮ মার্চ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

সাব-কমিটি পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন মূল কমিটিতে দিয়েছে। সাব-কমিটির ৪ জন সদস্য স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনের কপি বাংলানিউজের কাছে রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাব-কমিটির সদস্যরা ‘যশোর-বেনাপোল সড়ক অতিক্রমকালে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে গাছ কেটে রাস্তার উন্নয়ন করার পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকেন। ’ এদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সাব-কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী। এসব মানুষের দাবি, রাস্তাটি প্রশস্ত করতে প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে তা করতে হবে।

সাব কমিটির আহ্বায়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, জনগণের দাবি গাছ কেটে ৩২৯ কোটি টাকার কাজই করতে হবে, পিএমপি’র ২৭ কোটি টাকার কাজ করা যাবে না। এ দাবির সঙ্গে সাব কমিটি একমত পোষণ করছে। গাছ কাটার নিষেধাজ্ঞা ‘ভ্যাকেট’ (স্থগিতাদেশ) করতে প্রয়োজনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একযোগে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে যাবেন। কমিটি আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভ্যাকেট করার সুপারিশসহ রাস্তার কাজ শুরু করার সুপারিশ করেছে।

অথচ গত ৩০ জানুয়ারি সরকারের আরেক মন্ত্রণালয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গাছ না কাটতে সুপারিশ করেছিল। এমনকি কমিটি গাছ কাটাকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেছিল। সেদিন কমিটিতে বলা হয়েছিল পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়াই সড়ক বিভাগ গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, শতবর্ষী গাছগুলো কাটার বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ নিয়মানুযায়ী পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নেয়নি। এমনকি বনবিভাগের মতামতও নেয়নি। তাছাড়া একটি গাছের বয়স শত বছর হয়ে গেলে সেখানে একটি ইকো সিস্টেম দাঁড়িয়ে যায়। গাছটি কাটা হলে পুরো সিস্টেমের ওপর আঘাত পড়ে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই যেকোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিতে হবে। গাছ রেখেই উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৮
এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।