বুধবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) আবদুল মান্নান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার পূর্ব ইসলামাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মনির হোসেন (২৫), মেয়ে হোসনে আরা বেগম (৩০), একই বাড়ির মৃত জুনাব আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২৮) ও কাবিল মিয়া (২৬)।
দগ্ধরা হলেন- একই বাড়ির খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে লাকী আক্তার (২৫) লাকীর স্বামী মতিউর রহমান (৪০), ছোট মেয়ে রাহিমা আক্তার (১৪) ও বড় মেয়ের কন্যা (নাতনী) জান্নাতুল ফেরদৌস (৪)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদী খলিলুর রহমান স্বপরিবারের ঢাকায় বসবাস করেন। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল একই বাড়ির উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে মনির হোসেন ও হোসনে আরা খলিলের সম্পত্তিতে বসতঘর উঠাতে চেষ্টা করেন। এতে খলিল তাদের বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। ওইদিন রাতে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আনুমানিক ১টার দিকে খলিলের বসত ঘরের জানালা দিয়ে উল্লেখিত আসামিরা ঘুমন্ত অবস্থায় লাকী, মতিউর, রাহিমা ও শিশু জান্নাতের গায়ে এসিড নিক্ষেপ করেন। এতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। তাদের ওই অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এরপর খলিলুর ঘটনার তিনদিন পর ২৮ এপ্রিল মতলব উত্তর থানায় প্রথমে অজ্ঞাতানামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে উল্লেখিত আসামিদের চিহ্নিত করেন পুলিশ। এছাড়া আসামিদের মধ্যে ত জুনাব আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৫৫) তদন্ত চলাকালীন মারা গেলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পর পর চারজন বদলি হওয়ায় তৎকালীণ সময়ের চাঁদপুর সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) অরুন কুমার দত্ত ২০০২ সালের ২০ এপ্রিল তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাবিবুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলমান ছিল। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত শুরু হলে মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর মামলাটি চলমান অবস্থায় আদালত ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং আসামিরা অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া এবং আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কাজী হাবিবর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৮
আরবি/