বাবার ডান হাতের তর্জনী শক্ত করে চেপে দাঁড়িয়ে আছে তৌহিদুর রহমান। অপেক্ষায় আছে বিস্ময় চক্র রাইডটিতে চড়বে বলে।
পুরো পরিবারটি বেরিয়েছে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে। তাদের সাজগোছ আর চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিকই বলে দিচ্ছে রাঙ্গা হৃদয়ে বাজছে বিজয় উল্লাস, স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন।
কবি হয়তো এ জন্যই বলেছন- স্বাধীনতা তুমি খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা/খুকীর অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা। গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল/হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
শুধু তৌহিদরাই নয়, তাদের মতো হাজারো পরিবার স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করতে বেরিয়েছে ঢাকার বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, পার্ক, বিনোদনকেন্দ্রে। ভিড় জমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে।
শিশু পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, তৌহিদের মতো শিশুদের সঙ্গে বড়রাও এসেছেন। উপলক্ষ যখন আনন্দ করা, তখন ঘরে থাকাটা দায়। অনেককেই দেখা গেছে পরিবারে শিশু একজন, কিন্তু এসেছেন পাঁচজন। কেউ আবার কোলের শিশুসহ এসেছেন। শিশুপার্কে মোট ১২টির মতো রাইড রয়েছে।
এগুলো হচ্ছে-উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, বিষ্ময় চক্র, এসো গাড়ি চড়ি, ছোটদের রেলগাড়ি, চাকা পায়ে চলো, লম্ফ ঝম্ফ, ঝুলন্ত চেয়ার ও এফ-১৬ বিমান। তবে এসবের মধ্যে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ঝোক ছোটদের রেলগাড়ি, উড়ন্ত নভোযান ও উড়ন্ত বিমানের প্রতি।
আসমানী আমান নামের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আজকে স্বাধীনতা দিবস। তাই ঘুরতে এসেছি। ৭১ সালে এ দিনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরেছেন কপোত-কপোত, শিক্ষার্থীসহ বড়দেরই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কেউবা বসে আছেন। আবার অনেকেই ঢু মারলেন স্বাধীনতা জাদুঘরে।
স্বাধীনতা জাদুঘরে প্রথম পরিদর্শন করা ধানমন্ডির বাসিন্দা আশরাফ আলী খান বাংলানিউজকে বলেন- দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধকে জানার জন্য এটি দারুণ উদ্যোগ। ছোটদের নিয়ে এখানে আসা উচিত।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পাক শাসক গোষ্ঠীর ভরাডুবি হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করলেও বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং নির্বাচনের ইতিহাসে এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আইয়ুব-ইয়াহিয়া-ভুট্টো কুচক্রীরা। তারা একদিকে আলোচনার নামে প্রহসন শুরু করে দেয় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে, অন্যদিকে পূর্ব-পাকিস্তানে বাড়ায় সৈন্য সমাহার।
দিন যত গড়াতে থাকে, ক্ষোভে ফেটে পড়া সাত কোটি বাঙালি প্রস্তুত হতে থাকে স্বাধীনতার আন্দোলনের জন্য। চলে আসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে চূড়ান্ত নির্দেশনা আসায় শুরু হয় প্রতিরোধের প্রস্তুতিও। ৭ মার্চের পর সারাদেশে বিক্ষোভ আন্দোলন বাড়তে থাকলে, বাড়তে থাকে হত্যাকাণ্ডও। ক্ষমতা ছাড়ে না পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদল।
অবশেষে সব গণতান্ত্রিক পথকে রুদ্ধ করে ২৫ মার্চ রাতেই দমননীতির ঘৃণ্যতম অধ্যায় রচনা করে তারা। ঘুমন্ত, নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালানো হয় অপারেশন সার্চ লাইট নামের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
ইইউডি/ওএইচ/