ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

আজও মেলেনি মুক্তিযুদ্ধে মং রাজার বিরল অবদানের স্বীকৃতি

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:০২, মার্চ ২৬, ২০১৮
আজও মেলেনি মুক্তিযুদ্ধে মং রাজার বিরল অবদানের স্বীকৃতি মং রাজা মং প্রু সেইন। ফাইল ছবি

খাগড়াছড়ি: যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই রাজবাড়িতে খুলেছিলেন একটি অস্থায়ী লঙ্গরখানা। অকাতরে বিলিয়েছেন রাজ প্রাসাদের খাদ্য, গবাদিপশু, অস্ত্রশস্ত্র এবং যানবাহন। নিজে লড়েছেন সম্মুখযুদ্ধে। তিনি দেশের প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানকারী ব্যক্তি মং রাজা মং প্রু সেইন। কিন্তু যুদ্ধের এতো বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাননি প্রয়াত এই রাজা।

জানা গেছে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনালগ্নে এক নম্বর সেক্টরের অন্যতম সূতিকাগার ছিল রামগড়। চট্টগ্রাম থেকে রামগড় যাওয়ার পথেই মানিকছড়ি রাজবাড়ির অবস্থান।

ফলে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগঠকদের সহজ যাতায়াত পথ ছিলো ফটিকছড়ি থেকে মানিকছড়ি হয়েই। জীবন বাঁচাতে পালাতে থাকা হাজার হাজার শরণার্থী মাঝপথে বিশ্রামের জন্য বেছে নিতেন মং রাজবাড়ি।  

মং রাজবাড়ি বৃহত্তর চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের কাছে ছিল নির্ভরতার এক অনন্য ঠিকানা। আর মং রাজা মং প্রু সেইন মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের অকাতরে দিয়েছেন আশ্রয় ও রসদ।  তৎকালীন অস্থায়ী সরকারকে প্রথম তিনিই ১১শ’ ডলার দান করেছিলেন। যা ছিল প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানের ঘটনা। এছাড়া তিনি রাজ পরিবারের ৩৩টি বন্দুক এবং কয়েকটি দামি গাড়ি দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের।  মং রাজবাড়ি

পাকিস্তানী হানাদার ও পাঞ্জাবিদের তাণ্ডবে টিকতে না পেরে একাত্তরের ২ মে তিনি রামগড় হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ত্রিপুরার আগরতলায়। সর্বশেষ তিনি আখাউড়া সীমান্তে নেতৃত্ব দেন সম্মুখযুদ্ধেও। ভারতীয় সেনাবাহিনী মং প্রু সেইনকে সম্মানজনক কর্নেল উপাধিতে ভূষিত করেন। অথচ দেশ স্বাধীনের পর থেকেই তিনি রয়ে গেলেন আড়ালে। এমনকি পাননি মুক্তিযোদ্ধার সম্মানজনক স্বীকৃতি টুকুও।  

মুক্তিযোদ্ধা দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, মং রাজা মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য খাওয়া, থাকা, অর্থ, অস্ত্র সব বিলিয়ে দিয়েছেন। রাজা যুদ্ধের পক্ষে কাজ করায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর লোকজন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক প্রভাংশু ত্রিপুরা বলেন, মং রাজা মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সহযোগিতা করার কারণে পাকিস্তানীদের টার্গেটে পরিণত হন। তাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি শরণার্থী হিসেবে ভারতের রূপাইছড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে বিশ্ব মিডিয়ার সঙ্গে বিশ্ব জনমত তৈরিতে কাজ করেন। শেষের দিকে ট্রেনিং নিয়ে আখাউড়া সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে না পারাটা দুঃখজনক।

মং রাজা মং প্রু সেইন’র নাতী কুমার সুইচিং প্রু বাংলানিউজকে জানান, আমার দাদু (রাজা) যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এটি পার্বত্যবাসী ভালো করেই জানেন। তারপরও যুদ্ধের এতো বছর পার হয়ে গেলেও ওনাকে সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অনেক চেষ্টার পরও আমরা ওই স্বীকৃতি থেকে এখনও বঞ্চিত। তারপরও আশায় আছি, সরকার একদিন মুক্তিযুদ্ধে রাজার অবদানের স্বীকৃতি দেবে।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উদ্দিন মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মং রাজা ও তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধকে জানার জন্য মং প্রু সেইন অনন্য দৃষ্টান্ত। মানিকছড়ির রাজবাড়িটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা ও জানার জন্য অনন্য এক স্থাপনা হতে পারে। রাজার মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।

স্থানীয়রা মনে করেন, মং রাজা মং প্রু সেইন’র যুদ্ধকালীন অবদান যথাযথ মূল্যায়নের দাবি রাখে। তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতির মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম পেতে পারে ইতিহাসের নতুন পাঠও।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।