ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ঢাকা বারের ৬ আইনজীবী

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:১৯, মার্চ ২৬, ২০১৮
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ঢাকা বারের ৬ আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতি

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার ঢেউ এসে লাগে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতেও। তখন ঢাকা বারে আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় তিনশ। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন ছয়জন। আর বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। 

আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা পরবর্তীতে আইনজীবী হয়েছেন তাদের বক্ষে ধারণ করে আছে ঢাকা বারের শহীদ স্মৃতিফলক ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবীরা হলেন- একেএম সিদ্দিক (হেনা মিয়া), বাবু লাল মোহন সিকদার, মো. ইসহাক, খন্দকার আবু তালেব, মো. মফিজুর রহমান ও সৈয়দ আকবর হোসেন।

 

মুক্তিযুদ্ধে আইনজীবীদের ভূমিকা স্মরণ করতে গিয়ে ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হেনা মিয়া ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। দেশ স্বাধীন হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরবর্তীতে তার আর কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি। আর অন্যদের মধ্যে অনেককেই হানাদাররা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

এছাড়াও ঢাকা বারের হৃদয়ে বাংলাদেশ বুকে ধারণ করে আছেন ৫৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা। তাদের মধ্যে প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ছাড়া অন্যরা মুক্তিযুদ্ধের সময় আইনজীব ছিলেন না। তারা পরবর্তীতে আইনজীবী পেশা গ্রহণ করেন।  
৫৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা
তারা হলেন- আ ক ম মোজাম্মেল হক, মো. আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক মিয়া, সৈয়দ রেজাউর রহমান, মমতাজ বেগম, মো. কামরুল ইসলাম, খোন্দকার আব্দুল মান্নান, মো. আলতাফ উদ্দিন আহম্মদ, মো. সাইদুর রহমান মানিক, মো. মহসীন মিয়া, আবদুর রহমান হাওলাদার, আব্দুল ওয়াহেদ ভূঁইয়া, মো. মাহবুবুল বাছিদ (চান মিয়া), পরিমল কুমার বিশ্বাস, মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান, মো. হাবিব উল্লাহ্, মো. আলী আহসান, মো. সুলতান নাসের, মো. আখম আবুবকর সিদ্দিকী, মো. খন্দকার ‍সিদ্দিকুর রহমান, মো. আজাদ মাহবুব, এসএম সারোয়ার রহমান, আবু তালেব ‍শিকদার, মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, মো. রুহুল আমিন, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, মো. এস এম মোশতাক আহমেদ, মো. আশরাফ আলী মিয়া, মো. আ. আউয়াল, মো. নুরুল হক, মো. আফাজুল হক, মো. আবদুল হালিম, মো. দেলোয়ার হোসেন শরীফ, মো. রমজান আলী, মো. হাবিবুর রহমান শওকত, মো. বেলাল হোসেন, মো. ওসমান গনি,  হরেন্দ্র নাথ মন্ডল, মীর আমিনুর রশীদ, মো. জলিল উদ্দিন হাওলাদার, মো. মফিজুল হক, মো. নওশের আজাদ, মো. মতিউর রহমান, মোহাম্মদ ইসমাইল, মো. আব্দুল জব্বার, মো. আব্দুল মতিন, মো. আ. কাইয়ুম, মুহম্মাদ শফিউদ্দিন ভূঁইয়া, গাজী আনওয়ার হুসাইন, গাজী আমিন উল্যা, মো. তোরাব আলী খান, দেওয়ান মো. ইব্রাহিম, গোলাম মর্তুজা চৌধুরী, মো. রুহুল আমিন, মো. আলাউদ্দীন, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. আব্দুস সাত্তার (দুলাল)।  

রেজাউর রহমান আরও বলেন, আমি তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মাতৃভূমির টানে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। শেখ ফজলুল হক মণির নির্দেশে আমরা পূর্ব অঞ্চলে ছাত্রলীগের মধ্য থেকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য যুবকদের সংগঠিত করি।  

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের ভারতের হাবলং ও তাণ্ডুয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে একমাস তিনি ও তার দলের সদস্যরা ট্রেনিং গ্রহণ করেন। এরপর আগরতলা বেজক্যাম্পে ফিরে কুমিল্লা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তার অধীনে প্রায় দু’হাজার মুক্তিযোদ্ধা সদস্য ছিল। যেখানেই আক্রান্ত সেখানেই যুদ্ধ, এমন নির্দেশনা নিয়ে তারা কুমিল্লা, কসবা হয়ে ঢাকার অভিমুখে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে তার দলের অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। জানান তিনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব আইনজীবী শহীদ হয়েছেন, যে সব আইনজীবী লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন কিংবা যে সব মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীতে আইন পেশা গ্রহণ করেছেন তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও তাদের অবদান স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০১৬-১৭ মেয়াদের কার্যকরী পরিষদ ’হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামের স্মৃতিফালক উন্মোচন করেন।
আজও আইনজীবীরা যথাযথ মর্যাদায় তাদের স্মরণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
এমআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।