ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ, খরা জাল দিয়েও মিলছে না

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫৭, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ, খরা জাল দিয়েও মিলছে না নদ-নদীতে মাছ না পেয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন জেলেরা। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: ‘কাইল সারা রাইত ধরি খরা দিয়া মাছ পানু আধা সেরের মতোন। নদীত আর মাছ নাই বাহে’- কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মাছুয়াপাড়া গ্রামের ঝড়ুয়া মাঝি (৩৮)।

তিনি বলেন, ‘খরা এইংকা একটা জাল, ওই জাল দিয়া কোনো মাছ বেরবার পাবার ন্যায়’।

অতি সূক্ষ খরা জাল দিয়েও ধরা না পড়া দেশি নানা প্রজাতির মাছ এ অঞ্চলের নদ-নদী ও খাল-বিলগুলো থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেপল্লিটির মৎস্যজীবীরা।

আর এলাকাবাসী বলছেন, শিং, মাগুর, কৈ, মহাশৈল, গজার, বোয়াল, বাইন, টেংরা, ধেদাই, পাবদাসহ এসব মাছ এখন আর গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতেও খুব একটা চোখে পড়ে না।
   
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বদরগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা এক সময়ের প্রমত্তা যমুনেশ্বরী, চিকলি, করতোয়া, মরাতিস্তা ও ঘৃনই নদী শুকিয়ে গেছে। নদীগুলোর কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও ধূ-ধূ বালুচর, আবার কোথাও বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার করা যাচ্ছে।

টনি জাল (টানা জাল) দিয়ে মাছ মারতে আসা একই এলাকার আফজাল মিয়া বলেন, ‘নদীগুলোতে আর আগের মতো মাছ নেই। এক সময় আমাদের বাড়িতে মাছের গন্ধে থাকা যেতো না। আর এখন খাবার মাছটুকুই পাওয়া যাচ্ছে না’।

জেলে আলম মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু নদীতে মাছ না থাকায় অতিকষ্টে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি’।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া এবং ছোট মাছ সংরক্ষণে আইন না থাকায় এসব নদ-নদী ও খাল-বিলের ছোট প্রজাতির মাছগুলো ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।

বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, নদী ভরাট ও মা মাছের আবাসস্থল নষ্ট করা, ডোবা-নালায় সেচ দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, জলাশয় দূষণ ও রাক্ষুসে মাছের চাষসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল আলম পারভেজ জানান, মাছের অভয়াশ্রম নষ্ট হয়ে যাওয়া ও নতুন অভয়াশ্রম তৈরি না হওয়ায় এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগ প্রজননক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে দেশি মাছের অভাব পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।