ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এবারের বর্ষায়ও বন্যার কবলে পড়ার শঙ্কা ফেনীবাসীর

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এবারের বর্ষায়ও বন্যার কবলে পড়ার শঙ্কা ফেনীবাসীর

ফেনী: গেল বর্ষা মৌসুমে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী।

ভয়াবহ বন্যার আঘাত লাগে জেলার সবকটি উপজেলায়।

পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। এই বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

হিসেবের অঙ্কে যা আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রাণ হানি হয়েছিল ৩৫ জনের।

আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। নদী তীরের সেসব বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিলো সেসব স্থানে মেরামত হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। স্থানীয়রা বলছেন টেকসই স্থায়ী বাঁধ ছাড়া তাদের মুক্তি নেই।  

ফুলগাজী-পরশুরামের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১০২ টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিলো ফেনীবাসী। সেই বাঁধগুলো মেরামত কাজ চললেও স্থানীয়রা বলছেন কাজ হচ্ছে যেনতেন ভাবে। স্থায়ী সমাধান নেই। পানির চাপ পড়লে আবার ভাঙবে ।

পরশুরামের নিজ কালিকাপুরের বাসিন্দা কবির আহম্মদ বলেন, গত বছর যে বন্যা হয়েছে তার ক্ষত এখনো কাটেনি। মুহুরী নদীর বাঁধের যে স্থান দিয়ে পানি ডুকেছিলো সেই বাঁধটির কাজ এখনো হয়নি। সামনের বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি হলেই সেখান দিয়ে ডুকবে পানি।  

গেল বর্ষা মৌসুমে জেলার পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখার ভারতীয় অংশের বাঁধ কেটে দিয়েছিলো ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আর এ অংশের পানি প্রবেশই গতবছরের আগস্টে বন্যার ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছিলো দাবি ভুক্তভোগীদের। বাঁধের এক প্রান্তে কাজ হলেও আরেক প্রান্তের কাজ এখনও হয়নি। জটিলতা রয়েছে সীমানার। বাঁধটি মেরামত করা না গেলে ফের সেখান দিয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ কারণেই জোড়াতালির পরিবর্তে স্থায়ী ও শক্তপোক্ত বাঁধ চান এ অঞ্চলের মানুষ

ফুলগাজীর দৌলতপুরের বাসিন্দা সলিম উল্লাহ বলেন, প্রতিবছর নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভাঙে, ফের মেরামত হয়- আবার ভাঙে। তীরের মানুষের দুঃখ প্রতি বছরের। স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি কেউ।  

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে গেলবারের ভয়াবহ এ বন্যার ক্ষতি নিরূপণে কৃষিখাত, সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মোটরযান, ঘরবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করা হয়েছে। হিসেবের অঙ্কে যা ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকা। আর প্রাণহানি হয়েছে ৩৫ জনের। সেই চিত্র যেন আর ফিরে না আসে তার জন্য প্রদক্ষেপ চাইছেন স্থানীয়রা। বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন বাঁধ মেরামত ও নির্মাণকে ঘিরে প্রতিবছরই লুটপাট চলে বর্ষা এলে ফের জলে ভাসতে হয় স্থানীয়দের।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ফেনীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, বাঁধ মেরামতের নামে হরিলুট প্রতিবারই হয়। এবারও মেরামত কাজ চলছে। কিন্তু মানুষের মুক্তিতো নেই।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার জানান, বাঁধের মেরামত কাছ চলছে আশা করা যায় বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ শেষ হবে। তবে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বাঁধায় একটা অংশে মেরামত করা যায়নি। সে বিষয়েও জোর চেষ্টা চলছে।  

গেলবারের বন্যায় ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের দৈর্ঘ্য ১২২ কিলোমিটারের মোট ভাঙন ১০২ টি। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে সরকারের ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।  

সম্প্রতি মুহুরী কহুয়া নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে ৪ হাজার ৬৩৫ দশমিক ৩৯ কোটি টাকার খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এ প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়নি প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকের মতে অধিগ্রহণসহ প্রকল্প ব্যয় দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।  

জোড়াতালির কাজের এই চিত্র ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরামের প্রতি বছরের। নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ মেরামতে প্রতিবছর কোটি টাকা ব্যায় হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষা এলেই ফের ডুবতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বসতি, ফসল ও জনজীবন। মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া নদী তীরে একটি টেকশই স্থায়ী বাঁধ লাখো বাসিন্দাকে মুক্তি দিতে পারে এই বেহাল দশা থেকে।  


বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এসএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।