নীলফামারী: দম ফেলার ফুরসত নেই মৃৎশিল্পীদের। আর ক’টা দিন পরেই পহেলা বৈশাখ নববর্ষ।
উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া পালপাড়ায় প্রায় তিনশ পরিবারের বসবাস। বংশ পরস্পরায় তাঁরা সারাবছর মাটির তৈজসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। উৎসব ও মেলা এলে সেই ব্যস্ততা বাড়ে। নববর্ষের মেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মাটির খেলনা, সৌখিন জিনিসপত্র। হাতে ও স্প্রে রংয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
এখানকার মৃৎশিল্পীরা জানান, পারিবারিকভাবেই তারা পৈতৃক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকে। খেলনা তৈরির জন্য মাঠ থেকে মাটি আনা, মাটি নরম করা, সাচ বসানো, চুলায় পোড়ানো, রোদে শুকানো, রং করাসহ প্রায় সব কাজই করেন এখানকার নারী-পুরুষরা।
এ বছর ডিনার সেটে থাকছে প্লেট, গ্লাস, মগ, কারিবল, জগ, লবণ বাটি, সানকি (বাসন), কাপ-পিরিচ ও তরকারির বাটি। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে হাতি, ঘোড়া, গরু, হরিণ, সিংহ, বাঘ, ভালুক, জেব্রা, হাঁস, মুরগি। ছোট শিশুদের খেলার হাঁড়িপাতিল ও বিভিন্ন ধরনের চুলা। নতুন ডিজাইনে কয়েলদানি, মোমদানি, ফুলদানি, ঘটি-বাটি, আম, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, কামরাঙা, আতাফল, কলস, বাঙ্গি তৈরি করা হচ্ছে। যা মেলার ক্রেতাদের আলাদাভাবে আকৃষ্ট করবে। কোনো রাসায়নিক পদার্থের ছোঁয়া ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে মাটির এসব পণ্য। রং করা হয়েছে প্রাকৃতিক উপায়ে।
সূত্রমতে, নীলফামারীর সৈয়দপুরের মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় মাটির তৈরি শৈল্পিকতার ব্যাপক চাহিদা ও সুনাম রয়েছে উত্তরাঞ্চলে। তাই বৈশাখ ঘিরে উত্তরের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মেলার আয়োজক কমিটি থেকে তাগিদ আছে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় যাওয়ার জন্য। বৈশাখী মেলার চাহিদা মেটাতে এ বছর মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে মৃৎশিল্পীরা এবার পণ্যের ডিজাইনে পরিবর্তন এনেছেন।
চওড়া পালপাড়ার মৃৎশিল্পী সুবল চন্দ্র পাল জানান, গত কয়েক বছর করোনা ও কোনো বৈশাখী মেলা না হওয়ায় খেলনা বা শো-পিস জাতীয় পণ্য বিক্রি হয়নি। এ সময়টা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। এ সময় এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে দেনা আরও বেড়েছে। তবে এ বছর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা আসছেন পালপাড়ায়, এতে এ পাড়ার শতাধিক মৃৎশিল্পী খুব খুশি।
এ পাড়ার অজিত পাল জানান, শেষ সময়ে মৃৎশিল্পীরা বেশ ব্যস্ততায় দিন পার করছেন। মেলা ঘনিয়ে আসছে, তাই কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য পরিবারের সব সদস্যসহ বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। বৈশাখীসহ বিভিন্ন মেলায় তাদের পণ্য বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানেরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং সিরামিক ও প্লাস্টিক পণ্যকে চ্যালেঞ্জ করে এখনো পালপাড়ার প্রতিটি ঘরে মাটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছি আমরা। মাটি, রঙের দাম ও মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লানচু হাসান চৌধুরী জানান, মাটির জিনিসপত্রের জায়গা করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের জিনিসপত্র। তারপর এই পালরা পৈতৃক পেশা টিকে রাখার জন্য মাটির খেলনা ও অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করে জীবন ও জীবিকা টিকে রেখেছেন। পালপাড়ার বেশিরভাগ মৃৎশিল্পী এনজিওর জালে আটকা পড়েছেন। কুলাতে পারছেন এ পেশায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
এএটি