ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

আইন ও আদালত

সাবেক-কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরা নিয়ে যা বললেন প্রসিকিউটর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৯, অক্টোবর ২১, ২০২৫
সাবেক-কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরা নিয়ে যা বললেন প্রসিকিউটর

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত গুমের ঘটনায় প্রথমবারের মতো ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নিয়ে পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই ২৮ জনের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন।

আগামী ২২ অক্টোবর তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

তাদের হাজিরা নিয়ে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) কথা বলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি জানান, বেশ কয়েকজন সাবেক ও কর্মরত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) ওই দুটি মামলার নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী, এই তারিখে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আদেশটি বাস্তবায়ন করবেন। আসামিদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, উনারা যদি হাজির হন বা গ্রেপ্তার করে হাজির করা হয়, তাহলে ট্রাইব্যুনাল তাদের জামিন দিতে পারেন, যদি তারা জামিন চান। অথবা ট্রাইব্যুনাল জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দিতে পারেন। যদি জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেওয়া হয়, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন, উনারা কোন কারাগারে থাকবেন।

যদি কাল হাজির না হন বা হাজির করা না হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়ার জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং নতুন একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে, যেন ওই তারিখে তারা হাজির হতে পারেন। সেই তারিখেও যদি হাজির না হন, তাহলে পলাতক ঘোষণা করে স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল নিয়োগ করা হবে। তিনি আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন। এটাই ট্রাইব্যুনালের বিধান, বলেন প্রসিকিউটর তামিম।

গত ৮ অক্টোবর গুমের বিষয়ে দুটি ফরমাল চার্জ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই দুটি অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ওই দিন তিনি জানান, গুম, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে এই প্রথম দুটি ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। সেই চার্জ আমরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছি। ট্রাইব্যুনাল সবগুলোর বর্ণনা শুনেছেন। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে কগনাইজেন্স নিয়েছেন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেছেন।

সেদিনই প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গুমের অভিযোগে দুটি এবং জুলাই আন্দোলনে গুলি চালানোর অভিযোগে বিজিবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি; মোট ৩টি ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে।

এক. গুমের (টিএফআই) ঘটনায় আসামি শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। দুই. গুমের (জেআইসি) ঘটনায় আসামি শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তিন. জুলাই আন্দোলনে রামপুরায় বিজিবির গুলির ঘটনায় ৪ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এরপর ১১ অক্টোবর শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের মেসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন। আমরা ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম, এর মধ্যে ১৫ জন এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, গত ৮ অক্টোবর আইসিটিতে প্রথম দুইটি চার্জশিট জমা পড়ে। এরপর তৃতীয় আরেকটি চার্জশিট জমা হয়। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে আমরা টিভির স্ক্রল দেখে জানতে পারি যে চার্জশিট জমা পড়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেছে। চার্জশিটগুলোর মধ্যে একটি ছিল গুম-সংক্রান্ত, যা তখন ডিজিএফআইয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিয়ে। আরেকটি ছিল র‍্যাবের টিএফআই নিয়ে এবং আরেকটি ছিল ৪-৫ আগস্টের রামপুরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এরপরই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং নিয়ম অনুযায়ী তা আইজিপির কাছে পাঠানো হয়, যেখানে ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চার্জশিট কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাইনি।  

সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, চার্জশিটে প্রায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। এর মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন, এলপিআরে একজন এবং কর্মরত আছেন ১৫ জন। যারা অবসরে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে আমাদের সেনা আইন প্রযোজ্য নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবিধান স্বীকৃত বাংলাদেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সেই অনুযায়ী ৮ অক্টোবর কর্মরত ১৫ জন এবং এলপিআরে থাকা একজন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য আদেশ পাঠানো হয়। আদেশে বলা হয়, ৯ অক্টোবরের মধ্যে তারা যেন ঢাকা সেনানিবাসে রিপোর্ট করেন। যদিও আমরা কোনো পরোয়ানা পাইনি, তবুও আইন মেনে আমরা স্বপ্রণোদিতভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এরকম পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। ৫৪ বছরের ইতিহাসে এর চেয়েও জটিল ও সংবেদনশীল অনেক মামলা আমরা মোকাবিলা করেছি। যাদের নামে অভিযোগ ওঠে, প্রথমে তাদের আমরা হেফাজতে নিই। এরপর কোর্ট মার্শাল হয় এবং রায়ের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এবারও আমরা তাই করেছি। যাদের হেফাজতে আসতে বলা হয়েছিল তারা সবাই সাড়া দিয়েছেন, শুধু একজন ছাড়া। সেই একজন কর্মকর্তা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো সাড়া দেননি। পরে ১০ অক্টোবর আমরা তার সঙ্গে এবং তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। জানতে পারি, তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হন একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে, কিন্তু এরপর আর বাসায় ফেরেননি। তার পরিবারের সঙ্গেও আর যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। তিনি হলেন মেজর জেনারেল কবির।

পরদিন ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ শাখা থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপনে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে ‘কারাগার’ ঘোষণা করে সরকার।

ইএস/এমজে

আরও পড়ুন: 
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে, একজন পলাতক
সেনানিবাসের এক ভবনকে ‘সাময়িকভাবে কারাগার’ ঘোষণা 


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।