যুক্তরাজ্যের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভুলে ৩৩ হাজারেরও বেশি আফগান নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর, তালেবানের প্রতিশোধের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে গোপনে তাদের সবাইকে ব্রিটেনে পুনর্বাসন করা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ আদালতের নথিপত্রে এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
লন্ডনের হাই কোর্টের একজন বিচারক ২০২৪ সালের মে মাসে একটি রায়ে জানান, ব্রিটেনকে প্রায় ২০,০০০ মানুষকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিতে হতে পারে, যাতে ‘কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড’ ব্যয় হতে পারে। এই রায়টি মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।
বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জন হেলি পার্লামেন্টে জানান, আফগান রেসপন্স রুট নামে পরিচিত এই কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ব্রিটেনে আনা হয়েছে অথবা যাত্রাপথে রয়েছেন, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
তথ্য ফাঁসের শিকার ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কমিশনকৃত পর্যালোচনার সারাংশে জানানো হয়, ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত এই তথ্য ফাঁসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৬,০০০-এরও বেশি ব্যক্তিকে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এই ফাঁস হওয়া তথ্যে এমনসব আফগান নাগরিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা ব্রিটিশ বাহিনীকে আফগানিস্তানে সহায়তা করেছিলেন। ২০২১ সালে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনী সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সময় তাদের অনেকেই ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
২০২২ সালের শুরুতে অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হওয়া তথ্যকে জনসমক্ষে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে ২০২৩ সালে এই বিষয়ে একটি আইনি আদেশ জারি করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আদালতে যুক্তি দেখিয়েছিল যে এই তথ্য প্রকাশিত হলে তালেবানের হাতে ওই ব্যক্তিরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুরুতর সহিংসতার শিকার হতে পারেন। তবে তথ্যের একাংশ ২০২৩ সালের আগস্টে ফেসবুকে প্রকাশ পায়।
ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে প্রায় ১৯,০০০ আফগান নাগরিক এবং তাদের পরিবারের ব্যক্তিগত তথ্য ছিল, যারা ব্রিটেনে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
এই ঘটনার পর সাবেক কনজারভেটিভ সরকার আদালতের মাধ্যমে ইনজাংশন আদায় করে। কিন্তু ২০২৫ সালের জুলাইয়ে নির্বাচিত কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থী সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা শুরু করে, যেখানে ইনজাংশন, ডেটা লিক এবং পুনর্বাসন কর্মসূচির কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়। পর্যালোচনার ফলাফলে বলা হয়, আফগানিস্তান এখনও বিপজ্জনক হলেও তালেবানের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে প্রতিশোধমূলক অভিযান চালানোর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রী হেলি বলেন, আফগান রেসপন্স রুট এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই ডেটা ফাঁস কখনোই ঘটার কথা ছিল না।
এছাড়া অন্যান্য পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আরও প্রায় ৩৬,০০০ আফগান নাগরিককে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ”-এর অংশ হিসেবে ব্রিটিশ বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন করা হয়েছিল। এক পর্যায়ে ব্রিটেন সেখানে প্রায় ১০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করেছিল।
সূত্র: আল জাজিরা
এমএম