ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাছের ‘চিৎকার’ শুনে প্রতিক্রিয়া জানায় প্রাণীরা, দাবি বিজ্ঞানীদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৩, জুলাই ১৫, ২০২৫
গাছের ‘চিৎকার’ শুনে প্রতিক্রিয়া জানায় প্রাণীরা, দাবি বিজ্ঞানীদের

গাছের ‘চিৎকার’ শুনে প্রতিক্রিয়া জানায় প্রাণীরা—এমনই চমকপ্রদ তথ্য সামনে এনেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গাছ ও প্রাণীর মধ্যে একটি অদৃশ্য আন্তঃসম্পর্ক বা ‘ইকোসিস্টেম’ বিদ্যমান থাকতে পারে।

 

ইসরায়েলের তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রথমবারের মতো এমন প্রমাণ পেয়েছেন যে, মথ (প্রজাপতির মতো একটি পোকা) প্রজাতির স্ত্রী পোকা এমন টমেটো গাছে ডিম দেয় না, যেখান থেকে তারা ‘চাপে পড়া’ বা ‘অসুস্থ’ গাছের শব্দ শুনতে পায়।

দুই বছর আগে, এই গবেষক দলই প্রথম দেখিয়েছিল যে গাছ চাপের মধ্যে পড়লে বা অসুস্থ হলে এক ধরনের ‘চিৎকার’ করে, যদিও সেই শব্দ মানুষের শ্রবণ সীমার বাইরে। তবে সেই শব্দ শুনতে পারে অনেক পোকামাকড়, বাদুড় এবং কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী।

গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ইয়োসি ইয়োভেল বলেন, প্রথমবার কোনো প্রাণী গাছের উৎপন্ন শব্দের প্রতিক্রিয়ায় আচরণ পরিবর্তন করল।  

তিনি আরও বলেন, এটি এখনো ধারণার পর্যায়ে, তবে হতে পারে অনেক প্রাণী গাছের শব্দ শোনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়—যেমন, পরাগায়ণ করবে কি না, গাছের ভেতরে আশ্রয় নেবে কি না, কিংবা সেই গাছ খাবে কি না।

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষা করেন যেন নিশ্চিত হওয়া যায়—মথরা গাছের চেহারা দেখে নয়, শুধুমাত্র শব্দ শুনেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

গবেষক দল এখন যাচাই করছে, বিভিন্ন গাছ কী ধরনের শব্দ করে এবং সেই শব্দে অন্য প্রাণীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।

অধ্যাপক ইয়োভেল বলেন, অনেক জটিল যোগাযোগ পদ্ধতি থাকতে পারে গাছ ও প্রাণীর মধ্যে, আমরা এখন কেবল শুরু করছি।  

আরও একটি গবেষণার বিষয় হলো, গাছেরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে শব্দের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে কি না, যেমন খরার সময়ে একে অপরকে সতর্ক করে পানির ব্যবহার কমিয়ে দেয় কি না।

এই বিষয়ে অধ্যাপক লিলাখ হাদানি বলেন, একটি গাছ যখন চাপে পড়ে, তখন সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয় আশেপাশের অন্য গাছেরা এবং তারা নানা উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

গবেষকরা অবশ্য স্পষ্ট করেছেন, গাছ সচেতন কোনো জীব নয়। এই শব্দগুলো তৈরি হয় স্থানীয় পরিবেশের পরিবর্তনে সৃষ্ট শারীরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। তবে এই আবিষ্কারের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, এই শব্দগুলো অন্য প্রাণী—এমনকি সম্ভবত গাছেদের জন্যও কার্যকর হতে পারে।

অধ্যাপক হাদানি বলেন, গাছেরা যদি বুঝতে পারে শব্দ করাটা তাদের উপকারে আসছে, তাহলে তারা আরও বেশি বা জোরে শব্দ উৎপন্ন করতে পারে। আর প্রাণীর শ্রবণ ক্ষমতাও এমনভাবে বিবর্তিত হতে পারে, যেন তারা এই বিপুল তথ্য গ্রহণ করতে পারে। এটি এক বিশাল, অজানা ক্ষেত্র—একটি সম্পূর্ণ নতুন জগত, যা এখনো আবিষ্কারের অপেক্ষায়।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা শুধু স্ত্রী মথগুলোর আচরণের উপর নজর দেন, কারণ তারা সাধারণত ডিম পাড়ে টমেটো গাছে, যা থেকে বাচ্চা বেরিয়ে গাছ খেয়ে বড় হয়। ধারণা ছিল, মথেরা এমন গাছ খোঁজে যেটা সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান, যাতে তাদের বাচ্চারা যথাযথভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

তাই যখন কোনো গাছ পানি-সংকটে পড়ে শব্দের মাধ্যমে অসুস্থতা বোঝায়, তখন বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন ছিল—মথরা কি সেই সতর্কবার্তা শুনে সেই গাছে ডিম দেওয়া থেকে বিরত থাকবে?

উত্তর হলো—হ্যাঁ। তারা সেই গাছে ডিম দেয়নি, কারণ গাছের উৎপন্ন শব্দে তারা ‘অসুস্থতার’ বার্তা পেয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সাময়িকী ই- লাইফে।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।