রাশিয়ার সঙ্গে শত্রুতা করার ফল হাতেনাতে পাচ্ছে ইউরোপ। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অনেক প্রয়োজনেই রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল জার্মানি, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির মতো ইউরোপীয় দেশগুলো।
জার্মানির শহর শোয়েডটের কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাইছে। কারণ, ওই তেলের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় একটি শোধনাগারে সমস্যা বাড়ছে। জার্মানির চতুর্থ বৃহত্তম ওই শোধনাগারটিতে রাজধানী বার্লিনের জন্য ৯০ শতাংশের বেশি তেল উৎপাদিত হয়। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে পোল্যান্ড এবং জার্মানিতে পাইপলাইন দিয়ে তেল সরবরাহ বন্ধ করতে হয়েছে রাশিয়াকে।
শোয়েডটের ২০ শতাংশ বাসিন্দার রুটি-রুজি ওই শোধনাগার থেকে আসে। তাই সমস্যাটি পুরো শহরটিকে হুমকিতে ফেলেছে। শোধনাগারটির ওপর শহরটি টিকে আছে বলে সেখানকার মেয়র আনক্যাথরিন হপ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি রাশিয়ান তেল আমদানি আবার শুরু করার জন্য ফেডারেল সরকারের কাছে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সবসময় ভালো সম্পর্ক থাকার কথাও স্মরণ করেন তিনি।
ইউরোপজুড়ে একই পরিস্থিতি। রাশিয়ার গ্যাস আমদানির জন্য রীতিমতো ‘লড়াই’ করতে প্রস্তুত স্লোভাকিয়া। রাশিয়ার জ্বালানি কেনা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে বেলজিয়ামের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা ৫ জুন জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো।
৪ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৮তম দফার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে স্লোভাকিয়া। ২০২৮ সালের মধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি কমানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব ফিকো জোর দিয়ে বলেছেন, এমন পদক্ষেপ জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে, দাম বেড়ে যেতে পারে। বিকল্প ব্যবস্থার নিশ্চয়তা ছাড়া রাশিয়ার ওপর আর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিরুদ্ধে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
স্লোভাকিয়া সার্বভৌম হতে চায়, নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে চায়, বলেছেন ফিকো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকে তিনি স্লোভাকিয়ার জনগণ ও দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য লড়াই বলে মনে করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর ক্ষতিকারক নীতি চাপাচ্ছে বলে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন।
স্লোভাকিয়ার মতো করেই ভাবছে হাঙ্গেরি। দেশটিও রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধের পরিকল্পনার পক্ষে নয়। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো সতর্ক করে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্ত হাঙ্গেরির জ্বালানি নিরাপত্তা ধ্বংস করবে এবং দাম বাড়াবে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো অবৈধ বলে নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে রাশিয়ার ওপর প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে জ্বালানির দাম বেড়েছে। রাশিয়ান জ্বালানি না কেনার সিদ্ধান্তের কারণে ইইউকে আরও ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানি করতে বাধ্য করবে বলে সতর্ক করেছেন রুশ কর্মকর্তারা।
সূত্র: আরটি
এমএইচডি/এমজেএফ