ঢাকা, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ, উত্তেজনা তুঙ্গে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
কাশ্মীর হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ, উত্তেজনা তুঙ্গে

ঢাকা: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল থেকে শুরু করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত, অটারী সীমান্ত বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয় ভারতের মোদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

 

হামলার জেরে ভারত পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা করার একদিনের মধ্যেই পাকিস্তানও আটটি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। সঙ্গে দীর্ঘ বিবৃতিতে ভারতের একাধিক নীতির কড়া সমালোচনা করেছে ইসলামাবাদ।

ভারতের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান এক বিবৃতিতে জানায়, "ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অমীমাংসিত বিরোধ হলো কাশ্মীর। জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাবে তা স্বীকৃত। কাশ্মীর মানুষের অধিকারকে পাকিস্তান সমর্থন করে। ভারতের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সেখানকার মানুষ পছন্দ করে না। এর ফলে কাশ্মীরে সহিংসতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। একইসঙ্গে ভারতে সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলমানদের ওপর নির্যাতনও বৃদ্ধি পেয়েছে। জোর করে ওয়াক্ফ বিল পাশ করা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ। "

পাকিস্তান আরও অভিযোগ করে, "পহেলগাঁওয়ের মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা ত্যাগ করতে হবে ভারতকে। তারা নিজেদের জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তার দায় নিতে হবে। "

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "পাকিস্তান সর্বতোভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। বরং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে ভারত পূর্ব সীমান্তে বারবার অশান্তির চেষ্টা করে থাকে। কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং প্রমাণের অভাবে পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এটা ভিত্তিহীন। এর বিপরীতে, পাকিস্তানে ভারতীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। পাক জেলে বন্দি কুলভূষণ যাদব এর জলজ্যান্ত প্রমাণ। "

ভারতের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান আটটি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে:

১) সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ভারতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং এটি একতরফাভাবে স্থগিত করা যায় না। জল পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জাতীয় স্বার্থ, যা যেকোনো মূল্যে সুরক্ষিত করা হবে। সিন্ধু জলচুক্তি অনুসারে পাকিস্তানে জলের প্রবাহ বন্ধের যেকোনো প্রচেষ্টাকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হবে এবং এর জবাব দেওয়া হবে।

২) ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করছে। ভারতের সঙ্গে শিমলা চুক্তি-সহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের। যতক্ষণ না ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস, উসকানি দেওয়া, হত্যাকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা বন্ধ না করছে, ততক্ষণ চুক্তি স্থগিত থাকতে পারে।

৩) অবিলম্বে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ। বৈধ অনুমোদন নিয়ে যারা সীমান্ত পেরিয়েছেন, তাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফিরে যেতে হবে।

৪) সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্পের (এসভিইএস) অধীনে ভারতীয়দের ভিসা বাতিল। বর্তমানে যারা পাকিস্তানে আছেন, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।

৫) ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা। তাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরতে হবে।

৬) ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে।

৭) ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতে নিয়ন্ত্রিত সব বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ।

৮) ভারতের সঙ্গে সব বাণিজ্য বন্ধ। অন্য কোনো দেশের পণ্যও পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে ভারতে যেতে পারবে না বা সেখান থেকে অন্য দেশে যেতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
ইএসএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।