চোখে আতঙ্ক, শরীরজুড়ে ক্লান্তি আর নিপীড়নের স্পষ্ট ছাপ—ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি ফায়েজ আইয়ুবকে দেখে যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না তার মেয়ে মারাহ আইয়ুবের। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাবাকে আর দেখতে পাননি তিনি।
গত ৬ নভেম্বর গাজার একটি এলাকা থেকে আটক করা হয়েছিল ফায়েজকে। সম্প্রতি ইসরায়েল যখন কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়, তাদের মধ্যেই ছিলেন তিনি। মুক্তির পর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন ফায়েজ, জানান বন্দিদশার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
প্রতিদিন ভোর ৫টায় জাগিয়ে তোলা হতো ফিলিস্তিনি বন্দীদের। তারপর সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলত এক নির্মম রুটিন। বসা বা নড়াচড়া তো দূরের কথা, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হতো। কোনো কারণে একটু শরীর ঝাঁকালে বা দাঁড়ানোর ভঙ্গি বদলালে শুরু হতো মারধর।
ফায়েজ বলেন, আমাদের হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হতো দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। হাত তুলে দাঁড়াতে বাধ্য করা হতো, আর হাত নামিয়ে ফেললেই হামলা শুরু হতো। কোনো করুণা ছিল না।
প্রতিটি সপ্তাহেই ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়মিত হামলা ছিল বন্দীদের ওপর। লোহার রড দিয়ে পেটানো হতো। এতে অনেকের বুক ভেঙে গেছে, হাঁটু চূর্ণ হয়েছে, কেউ কেউ মেরুদণ্ডের জটিল আঘাতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত পর্যন্ত হয়ে পড়েছে।
বন্দীদের জন্য ছিল না কোনো বসার জায়গা, ছিল না ঘুমানোর ব্যবস্থা বা ন্যূনতম খাবার। কেবলই ছিল অপমান, নির্যাতন আর নিঃসঙ্গতা। রাতের বেলায় তাদের ঘুম ভেঙে দেওয়া হতো—কখনো গায়ে গ্যাস ছিটিয়ে, কখনো চুলায় দেওয়া হতো পাউডার জাতীয় পদার্থ।
ফায়েজের ভাষায়, আমরা যেন মানুষ ছিলাম না। আমাদের আচরণ করা হতো এমনভাবে, যেন কেবলই সংখ্যার মতো। আমার ভেতরটা এখনো কারাগারেই বন্দী।
আর তার মেয়ে মারাহ বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর বাবার কোনো খোঁজ পাইনি। মুক্তি পেয়ে যখন তিনি এলেন, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু যে বাবাকে ফিরে পেয়েছি, তিনি আর আগের মানুষটি নন। আমার চেনা বাবা এখন যেন শুধু দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়ে আছেন।
ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কী ঘটে চলেছে—ফায়েজের এই সাক্ষাৎকার যেন তার এক মর্মস্পর্শী দলিল। এবং এমন অনেক ফায়েজ এখনো নিখোঁজ, যাদের পরিবার শুধু অপেক্ষা করে আর প্রতিদিন একটু একটু করে ভেঙে পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৫
এমএইচডি/এমজে