মিউনিখের রাতটা ছিল স্বপ্নের মতো। দীর্ঘদিনের ব্যর্থতা, হতাশা আর কষ্ট এক রাতেই মুছে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের মুকুট জিতে নিল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)।
এক নতুন পিএসজি, এক পরিপূর্ণ জয়
ইতালির অভিজ্ঞ ক্লাব ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের এই কীর্তি শুধু ফলাফলের দিক থেকেই নয়, পারফরম্যান্সের দিক থেকেও জায়গা করে নেবে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরাদের তালিকায়। পিএসজির নতুন রূপ, তরুণদের গতি, উদ্যম আর রণনীতি—সবকিছুর সমন্বয়ে গড়ে উঠল এক ঐতিহাসিক পারফরম্যান্স।
দেজিরে দুয়ের উত্থান: এক নতুন মহাতারকার জন্ম
১৯ বছর বয়সী দেজিরে দুয়ে ছিলেন এই রাতের হৃদয়স্পন্দন। ম্যাচের ১২ মিনিটে আশরাফ হাকিমিকে দিয়ে প্রথম গোল করান, ২০ মিনিটে নিজেই স্কোরশিটে নাম লেখান। ৬৩ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে নিজের জাত চিনিয়ে দেন। এরপর বদলি হওয়ার সময় তিনি মাঠ ছাড়েন মাথা উঁচু করে, যেন ভবিষ্যতের এক ফুটবল সম্রাটের ঘোষণা দিয়ে।
দুয়ে হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে জোড়া গোল করা সবচেয়ে কনিষ্ঠ ফুটবলার (১৯ বছর ৩৬২ দিন)। কেবল প্যাট্রিক ক্লুয়িভার্ট (১৯৯৫) আর কার্লোস আলবের্তো (২০০৪) এর আগে কিশোর বয়সে এই আসরে ফাইনালে গোল করেছিলেন।
লুইস এনরিকে: এক পিতা, এক কোচ, এক কিংবদন্তি
২০১৫ সালে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সময় মেয়ে জানার সঙ্গে মাটিতে পতাকা গেড়ে উদযাপন করেছিলেন এনরিকে। ২০১৯ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে ক্যানসারে হারিয়ে ফেলা মেয়ের স্মৃতিতে এবারও তিনি সেই স্মারক পুনরাবৃত্তি করলেন—এইবার পিএসজি জার্সিতে।
ম্যাচশেষে যখন তিনি মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পরেন, তখন ‘পিএসজি আল্ট্রাস’ এক বিশাল পতাকায় তুলে ধরেন পিতা-কন্যার সেই একই ছবি। এক আবেগময় মুহূর্তে ফুটবল আর ব্যক্তিগত শোক একসূত্রে গাঁথা হয়ে পড়ে।
এমবাপ্পে-পরবর্তী যুগের সাফল্য
নেইমার, এমবাপ্পে, মেসির গ্ল্যামার–নির্ভর যুগ পেরিয়ে এবার পিএসজি গড়েছে এক তরুণ, সংঘবদ্ধ দল। লুইস এনরিক এই রূপান্তরের মূল কারিগর। কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রস্থান যে নতুন সূচনার দ্বার খুলে দিয়েছে, এই জয় তার নিখুঁত প্রমাণ।
ইউরোপীয় ফাইনালের ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া জয়
এই ৫-০ গোলের জয় চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ব্যবধানে পাওয়া জয়। খিচা কাভারাস্কেইয়া ও সেনি মায়ুলুর অতিরিক্ত দুটি গোল দলকে পরিপূর্ণতা এনে দেয়। প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলানকে যেন এক মুহূর্তের জন্যও খেলার সুযোগ দেয়নি এনরিকের বাহিনী।
এমএইচএম