বাগেরহাট জেলায় আসন কমানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন। একই সঙ্গে ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছে ওই সংগঠন। একই সঙ্গে বাগেরহাট জেলার ৪টি আসন বহাল রাখার দাবিও জানিয়েছে।
নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বাগেরহাট-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের চেয়ারম্যান এবং তাঁতীদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমরা খুবই অভাগা জেলা বাগেরহাট। আমাদের একটি আসন নাই হয়ে গেছে। বাগেরহাটে আমার জন্মলগ্ন থেকে চারটি আসন। এই বাগেরহাট-৪ আসন যেটা নাই হয়ে গেছে, সেখান থেকে আমি এসেছি। এ আসনটি বহাল রাখার জন্য সিইসির কাছে দাবি জানিয়েছি।
কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু মাত্র ভোটারের উপর ভিত্তি করে যদি আমাদের ওখানে আসন কেটে দেওয়া হয়, আমরা একেবারে অনুন্নত থাকবো। আমাদের এই উন্নয়ন সুবিধাটা হবে না। বাগেরহাটে চারটি আসন রাখতে বলেছি আমরা। এছাড়া ইসির প্রস্তাবিত সীমানা নিয়ে কেউ মামলা করলে নির্বাচনও আটকে যেতে পারে।
তিনি বলেন, কেউ যদি এখন দ্রুত কোনো মামলা করে, আইনের ব্যবস্থা নেয় তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়াটা থেমে যাবে। মানুষের যে আশা আকাঙ্ক্ষা, ভোটাধিকার সেটা তারা প্রয়োগ করতে পারবেন না। যে কোনো লোক এখন করতে পারে। সবাইকে তো বুঝানো যাবে না। এক একটা আসনে ১৭/১৮ জন এমপি প্রার্থী বিভিন্ন দলের, এটা করলে যদি হ্যাং (ঝুলে যাওয়া) হয়ে যায়, তাহলে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া সমস্যা হয়ে যাবে।
কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, বৈঠকে সিইসি নিয়ম মেনে সীমানা নিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। ইসি শুনানি করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৩০ জুলাই) ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ৬টি করা হয়েছে এবং বাগেরহাটের আসন ৪টি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া পরিবর্তন আনা হয়েছে ৩৯টি আসনে। এগুলো হলো-পঞ্চগড় ১ ও ২; রংপুর ৩; সিরাজগঞ্জ ১ ও ২; সাতক্ষীরা ৩ ও ৪; শরিয়তপুর ২ ও ৩; ঢাকা ২,৩,৭,১০,১৪ ও ১৯; গাজীপুর ১,২,৩,৫ ও ৬; নারায়ণগঞ্জ ৩,৪ ও ৫; সিলেট ১ ও ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩; কুমিল্লা ১,২,১০ ও ১১; নোয়াখালী ১,২,৪ ও ৫; চট্টগ্রাম ৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট ২ ও ৩ আসন।
ইসির প্রকাশিত খসড়ার ওপর আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি জানানো যাবে। এরপর দাবি-আপত্তি শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
আগে বাগেরহাট-১ মোল্লারহাট-ফকিরহাট-চিতলমারি; বাগেরহাট-২ বাগেরহাট সদর এবং কচুয়া; বাগেরহাট-৩ রামপাল এবং মোংলা, বাগেরহাট-৪ মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলা; এই চারটি আসন ছিল বাগেরহাটে।
খসড়ায় বাগেরহাট-১ আসনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল নিয়ে বাগেরহাট-২ আসন এবং মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন প্রস্তাব করা হয়েছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫শ। এটা ধরে জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। দুই জেলার আসনই অ্যাফেক্টেড (ক্ষতিগ্রস্ত) হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে।
এদিকে সীমানার খসড়া নিয়ে বাগেরহাটের পর অন্য জেলার আসনগুলো থেকেও আপত্তি আসা শুরু করেছে।
ইইউডি/এমইউএম