ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

খেলা

ভাত-রুটি না পেয়ে দুর্বল শরীর, তবু লড়ছেন গাজার বডি বিল্ডাররা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৮, আগস্ট ২২, ২০২৫
ভাত-রুটি না পেয়ে দুর্বল শরীর, তবু লড়ছেন গাজার বডি বিল্ডাররা সংগৃহীত ছবি

গাজার যুবকরা এখনো নিজেদের শক্তি ধরে রাখতে মরিয়া। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যাভাবের মধ্যেও তাঁবুর ভেতর গড়ে তোলা অস্থায়ী জিমে পুরোনো ভাঙাচোরা যন্ত্রপাতি দিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

তাদের কাছে এখন পেশি বজায় রাখা মানে কেবল খেলাধুলা নয়, বরং বেঁচে থাকার এবং প্রতিরোধের প্রতীক।

২৩ বছরের তরুণ তারেক আবু ইউসুফ একসময় প্রতিদিন দীর্ঘ অনুশীলনে ব্যস্ত থাকলেও এখন সপ্তাহে এক-দুদিনের বেশি অনুশীলন করতে পারেন না। মার্চ থেকে খাদ্য অবরোধ আরও কঠোর হওয়ার পর তিনি ১৪ কেজি ওজন হারিয়েছেন। তারেক বলেন, ‘গাজায় এখন খাওয়াটাই অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবু আমরা যারা বডি বিল্ডার, তাদের কাছে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক জীবনের শেষ অবলম্বন। ’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যালয় জানিয়েছে, গাজার প্রায় সব মানুষই ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, বিশেষত উত্তর গাজায় চলছে দুর্ভিক্ষ। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলছে, এটি সম্পূর্ণ মানুষের তৈরি সংকট। সীমান্তে হাজার হাজার টন খাদ্য সহায়তা আটকে আছে, কিন্তু ইসরায়েলি অবরোধের কারণে তা ভেতরে পৌঁছাতে পারছে না।

অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক আদলি আল-আসার, যিনি আন্তর্জাতিক পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়ন এবং আরব চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়বার স্বর্ণ জিতেছেন, খান ইউনিসে বোমায় ধ্বংস হওয়া জিম থেকে কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে আল-মাওয়াসির শরণার্থী শিবিরে অস্থায়ী জিম গড়ে তুলেছেন। আগে যেখানে দিনে ২০০ জন অনুশীলন করত, এখন তার ১০ শতাংশও জিমে যেতে পারে না।

আল-আসার নিজেই ১১ কেজি ওজন হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাঁধের মাংসপেশি ছিল ৪০ সেন্টিমিটার, এখন ৩৫-এর নিচে নেমে গেছে। সবার অবস্থাই একই রকম। ’

২০ বছর বয়সী আলি আল-আজরাক যুদ্ধের শুরুতে ঘরছাড়া হয়ে এখানে এসেছেন। তার ওজন ৭৯ কেজি থেকে ৬৮ কেজিতে নেমে গেছে। আগে যেখানে ১০০ কেজি বেঞ্চ প্রেস করতেন, এখন সর্বোচ্চ ৩০ কেজি তুলতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সামান্য রুটি, ভাত বা পাস্তা ছাড়া আর কিছুই পাই না। একেবারেই প্রোটিন বা পুষ্টিকর খাবার নেই—মাংস, ডিম, মাছ, ফল বা বাদাম কিছুই না। ’

২৯ বছরের খালেদ আল-বাহাবসা, যিনি এপ্রিল মাসে ইসরায়েলি হামলায় আহত হন, আবারও জিমে ফিরেছেন। তার শরীরে এখনো শেলবিদ্ধ টুকরো রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনুশীলন আমাকে মৃতদের কাছ থেকে জীবিতদের দিকে টেনে আনে। এটি আমাদের মানসিক বেঁচে থাকার উপায়। ’

২২ মাসের টানা হামলায় গাজায় ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত। তবুও ক্রীড়াবিদরা মনে করেন, খেলাধুলা তাদের জীবনের প্রতীক। আল-আসার বলেন, ‘এটি শুধু জিম নয়, এটি গণহত্যা ও ধ্বংসের মাঝেও জীবনের খোঁজ। ’

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।