ঢাকা, শনিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৭ সফর ১৪৪৭

খেলা

‘একটা জাতির খেলাধুলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে’—ফিলিস্তিনি ক্রীড়াঙ্গনের ভয়াবহ দুর্দশা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৭, আগস্ট ১, ২০২৫
‘একটা জাতির খেলাধুলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে’—ফিলিস্তিনি ক্রীড়াঙ্গনের ভয়াবহ দুর্দশা সংগৃহীত ছবি

ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনে শুধু জীবনহানিই ঘটছে না, পুরো ক্রীড়াঙ্গনও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে—এই বার্তাই তুলে ধরা হলো কাতার প্রেস সেন্টার আয়োজিত এক সেমিনারে।  

‘ফিলিস্তিনি খেলাধুলার ওপর ইসরায়েলি নিপীড়ন’ শীর্ষক এই আলোচনায় অংশ নেন খেলাধুলা ও মানবিক বিষয়ে আগ্রহী সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা।

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন কাতার প্রেস সেন্টারের স্পোর্টস কমিটির চেয়ারম্যান ও ক্রীড়া সাংবাদিক আলি ইসা। মূল বক্তব্য দেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহমেদ রাজউব ও সম্প্রচারক হাসান বদর।

রাজউবের কথায় উঠে আসে মর্মান্তিক বাস্তবতা—২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজায় নিহত ফুটবলার ২৫০ জন, পশ্চিম তীরে ২৫ জনের বেশি। একই সঙ্গে নিহত হয়েছেন জাতীয় ভলিবল দলের ১০ জন খেলোয়াড়সহ ২৩ জন ভলিবল খেলোয়াড়, ২৫ জন বাস্কেটবল খেলোয়াড়, ১৫ জন তায়কোয়ান্দো অ্যাথলেট, ১০ জন জিমন্যাস্ট, ১০ জন জুডোকা, ২৬ জন কারাতেকা এবং ৫১ জন স্কাউট সদস্য।

এছাড়া প্রাণ হারিয়েছেন ক্রীড়া প্রশাসক ও সংগঠকরাও। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন—ফিলিস্তিন ভলিবল ফেডারেশনের প্রধান মোহাম্মদ আল-দালু, বডি বিল্ডিং ফেডারেশনের প্রধান কামেল আল-ইয়াজিদি, ও শুজাইয়া ক্লাবের প্রধান নায়েফ আল-হাত্তাব।

ক্রীড়া সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। অন্তত ১০ জন খেলাধুলা কাভার করা সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যারা অনেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সাধারণ সাংবাদিকতায় চলে গিয়েছিলেন। এমনকি যারা কেবল ধারাভাষ্য দিতেন, কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না, তারাও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের ক্রীড়াসংক্রান্ত অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ৩৫টি ইনডোর জিমনেশিয়ামের মধ্যে ২৯টিই ধ্বংস হয়েছে, ফুটবল মাঠ ধ্বংস হয়েছে ২৩টি (সম্পূর্ণ ধ্বংস ১৯টি)। বিখ্যাত স্টেডিয়ামগুলো যেমন—ইয়ারমুক, ফিলিস্তিন ও আল-দুররা—পরিণত হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

ধ্বংস হয়েছে ৫৮টি ক্রীড়া ক্লাবের সদর দপ্তর, মাত্র ছয়টি ক্লাব কোনোভাবে টিকে আছে। ৩টি সুইমিং পুল, ১৫টি বাস্কেটবল কোর্ট, ১৭টি পাঁচ-জনের ফুটবল মাঠ ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ফিলিস্তিনের ঘোড়াশালায় থাকা সব খাঁটি আরব জাতের ঘোড়াও মারা গেছে।

আহমেদ রাজউব বলেন, ‘ফিলিস্তিনি খেলাধুলা যেন অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের মনোবল বিধ্বস্ত। এখান থেকে নতুন করে শুরু করতেই এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ। ’

তিনি আরও জানান, ফিলিস্তিনি জাতীয় ফুটবল দল এখন একমাত্র সক্রিয় দল, যা যুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই দেশের বাইরে থাকায় টিকে আছে। এই দলকে ঘিরেই এখন ফিলিস্তিনি জনগণের আশা।

রাজউব ফিলিস্তিনের অলিম্পিক প্রতিনিধিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। অনেক ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট আরব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতেই পারেননি, অথচ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একজন ইসরায়েলি সৈন্য প্যারিসে পদক পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা দ্বিচারিতা, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একেক জায়গায় একেক মানদণ্ড প্রয়োগ করছে। ’

তথ্যসুত্র: গালফ টাইমস

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।