ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর (৪৮) ও তার স্ত্রী রুমা আক্তারের (৪০) নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন, মিথ্যা তথ্য প্রদান ও জ্ঞাত আয়ের থেকে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্যের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুর সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন ফরিদপুর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ।
জানা যায়, ওয়াদুদ মাতুব্বর সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কাঠিয়াগট্টি এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি পরপর দুইবার সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সর্বশেষ চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সরকারের এক ঘোষণায় অপসারিত হোন। বর্তমানে তিনি একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তিনি আওয়ামীলীগ নেতা হলেও দলীয় কোনো পদে ছিলেন না এবং ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া তার স্ত্রী রুমা আক্তার পার্শ্ববর্তী সিংহপ্রতাপ গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামীলীগ নেতা ইমামুল হোসেন তারা মিয়ার মেয়ে। স্বামী ওয়াদুদ মাতুব্বর চেয়ারম্যান থাকাকালীন রুমা আক্তারের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন।
জেলা দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অবেধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকে অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে গত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর সম্পদ বিবরনী দাখিল করেন এবং ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেন দুদক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় ওয়াদুদ মাতুব্বর ও তার স্ত্রী রুমা আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওয়াদুদ মাতুব্বর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিবরনীতে মোট ২৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৮৪ টাকার মূল্যের সম্পদ উল্লেখ করেন। অনুসন্ধানকালে ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩১ টাকার সম্পদের সন্ধান মিলে। এরমধ্যে ৫৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন তিনি। অপরদিকে ২০ লক্ষ্য টাকা ঋণের মিথ্যা তথ্য দেন দুদকে। এ ছাড়া ২০১২-১৩ থেকে ২৩-২৪ অর্থ বছরে আয়কর রিটার্নের তথ্যমতে বৈধ সম্পদের পরিমাণ ৩১ লাখ ২০ হাজার ১৬৭ টাকার কথা উল্লেখ করেন দুদক।
অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, তার স্ত্রী রুমা আক্তার ৭৪ লক্ষ্য ৪১ হাজার ৮৯৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করে এবং মিথ্য তথ্য প্রদান করে।
অনুসন্ধানকালে তার নামে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পায় দুদক। যারমধ্যে এক কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ১৩৭ টাকা অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এই সম্পদের মধ্যে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকায় একটি ফ্লাটবাসাও তার রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তার বৈধ আয় ১৯ লক্ষ্য ৭২ হাজার ৬১৭ টাকা মূল্যের সম্পদের কথা উল্লেখ করেন।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, ওয়াদুদ মাতুব্বর ও তার স্ত্রীর এসব সম্পদ অর্জনের বৈধ আয়ের উৎস বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
এএটি